এখনও দগদগে আমফানের ক্ষত। সামাল দেওয়া যায়নি সেই ধাক্কা। তারইমধ্যে গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো শুক্রবার আসছে ভরা কোটাল। তার জেরে জলস্তর কয়েক মিটার পর্যন্ত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে বাংলার উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের।আমফানের জেরে বহু জায়গায় নদীর বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। ঢুকে গিয়েছে নোনাজল। প্লাবিত হয়েছে গ্রাম, চাষের জমি। আমফানের দাপট কোনওক্রমে সামলে দিতে পারলেও কোথাও কোথাও নদীবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। কয়েকটি জায়গায় বাঁধের মেরামত করা হলেও ভরা কোটালের জলোচ্ছ্বাস সামলাতে পারবে কিনা, তা জানেন না বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। আমফানের জেরে গৃহহীন হয়ে এমনিতেই অনেকে অস্থায়ী ছাউনিতে কোনওক্রমে দিন গুজরান করছেন। ভরা কোটালে বাঁধ ভেঙে জলের তোড় গ্রামের ভিতর ঢুকলে সেই অস্থায়ী ছাউনির কী পরিণতি হবে, তা ভেবেই আশঙ্কিত বাসিন্দারা।সেজন্য প্রশাসনের তরফে বাড়তি সতকর্তা নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ভিডিয়ো কনফারেন্সে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আধিকারিকদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রয়োজনে উপকূলবর্তী এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন তিনি। মমতা বলেন, '৬ জুন ভরা কোটাল আসবে। বাঁধের ফাঁক দিয়ে হুড়মুড়িয়ে জল ঢুকতে পারে। যে বাঁধগুলি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেগুলি ভেঙে যেতে পারে। যদি বৃষ্টি হয় তো পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বিপদসঙ্কুল এলাকা থেকে জেলা প্রশাসনকে মানুষদের উদ্ধার করতে হবে।'প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, আমফানের সময় প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে এসে শিবিরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু গ্রামের পর গ্রাম এখনও জলের তলায় থাকায় অনেকেই নিজের বাড়িতে ফিরতে পারেননি। আমফানের প্রভাবে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলাগনাথন বলেন, ‘কুলতলি, গোসাবা এবং পাথরপ্রতিমা থেকে আমরা প্রায় ২০,০০০ মানুষকে উদ্ধার করার পরিকল্পনা করছি। আমফানের সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ওই তিনটি ব্লক। তবে এটা যেহেতু জোয়ার, তাই কয়েক ঘণ্টা পর জলস্তর নামতে শুরু করে।’একই অবস্থা অপর ২৪ পরগনারও। হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল জানান, গ্রামের রাস্তায় পলিথিনের ছাউনির নীচে এখনও ৩৫০ টির বেশি পরিবার বাস করছে। সেগুলি উঁচু এলাকায় হওয়ায় তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত। নীচু এলাকার মানুষদের শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি বলেন, 'কোটাল এলে কয়েক ঘণ্টার জন্য গ্রামবাসীদের আমফানের শিবিরে যাওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। যাঁরা নীচু এলাকায় থাকেন, তাঁদের বেশিক্ষণ থাকতে হতে পারে। কারণ জল নামতে বেশি সময় লাগতে পারে।'প্রশাসনের হিসেব, আমফানের ফলে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার নদী বাঁধ এবং চার কিলোমিটার সমুদ্র বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ১১ লাখ হেক্টর জমিতে নোনা জল ঢুকে গিয়েছে। মিষ্টি জলে মাছ চাষের জায়গায় নোনা জল ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫৮,০০০ হেক্টর জলাশয়।এই পরিস্থিতিতে ভরা কোটলের ভ্রুকূটিতে শঙ্কিত মানুষ এবং প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, নদীর ধারে এবং সমুদ্রের কাছে বিপদসঙ্কুল এবং নীচু এলাকার গ্রামবাসীদের সতর্ক করা হয়েছে। তাঁদের ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা।বিশেষ বার্তাপশ্চিমবঙ্গের ত্রাণ তহবিলে দান করুনWEST BENGAL STATE EMERGENCY RELIEF FUND(Part of Chief Minister Relief Fund)http://wbserf.wb.gov.in/wbserfA/C No: 628005501339Bank: ICICI BankBranch: HowrahIFSC Code: ICIC0006280MICR Code: 700229010SWIFT Code: ICICINBBCTS