দক্ষিণ কলকাতার রানি বিড়লা গার্লস কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধি নির্বাচন নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। তবে শেষমুহূর্তে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। কলেজের অধ্যক্ষা শ্রাবন্তী ভট্টাচার্য হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিন্তু অধ্যক্ষার অসুস্থতা ঘিরেই শুরু হয়েছে নয়া বিতর্ক।
আরও পড়ুন: কলেজেগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন কবে, জানালেন শিক্ষামন্ত্রী
জানা গিয়েছে, কলেজ পরিচালন সমিতি গঠনের প্রক্রিয়া জটিল আকার নিয়েছে। কলেজ প্রশাসকের পরিবর্তে ৯ জুন নতুন করে গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট ও আরও দু’জন সদস্য নিয়োগ করেছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর।
পাশাপাশি, উচ্চশিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে পরিচালন সমিতিতে। এই পরিস্থিতিতে ১১ জুন কলেজের অধ্যক্ষা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। ঠিক করা ছিল, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। শিক্ষকদের তিনটি পদে আটজন এবং শিক্ষাকর্মীদের একটিতে তিনজন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। স্ক্রুটিনিও হয়ে গিয়েছিল।
এদিকে অধ্যক্ষ শ্রাবন্তীর অভিযোগ, ভোট স্থগিত করতে তাঁকে বিভিন্ন দিক থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। বিশেষ করে নিখিলবঙ্গ অধ্যক্ষ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানস কবি টেলিফোনে বারবার তাঁকে ভোট না করার অনুরোধ করেন। এমনকী বুধবার মানস-সহ অধ্যক্ষ পরিষদের কয়েকজন কলেজে গিয়ে সরাসরি শ্রাবন্তীর সঙ্গে দেখা করেন। এই চাপেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বলে দাবি শ্রাবন্তীর। শ্রাবন্তীর দাবি, ভোট বন্ধ রাখার জন্য গত ক’দিন ধরেই তাঁকে অনুরোধ জানানো হচ্ছিল। বুধবার একাধিক অধ্যক্ষ এসে ফের অনুরোধ জানান। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সামনেই আলোচনা চলে। এতে পরিবেশ চাপপূর্ণ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে সহকর্মীরাই তাঁকে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
অন্যদিকে মানস কবির বক্তব্য, তিনি সম্প্রতি গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে দফতরের মনোনীত প্রতিনিধি হয়েছেন। অথচ তাঁকে কিছু না জানিয়েই ভোটের ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি অধ্যক্ষকে কেবলমাত্র নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর কথায়, অনুরোধ শুনে তিনি হাসিমুখেই ছিলেন। ফলে চাপে ফেলার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
এ নিয়ে পাল্টা মন্তব্য করেছেন শ্রাবন্তী। তাঁর কথায়, নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি, মনোনয়ন গ্রহণ, স্ক্রুটিনি সব নিয়ম মেনে হয়েছে। ২০১৭-র সংশোধিত আইন অনুযায়ী জিবি গঠনের পদ্ধতিতে কোনও ফাঁক নেই। তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি এখনও আসেননি, কিন্তু গভর্নিং বডির বাকি সদস্যদের নিয়ে বৈঠক আগামী সোমবার ডাকার কথা বলা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও তাঁকে ভোট থামাতে বারবার চাপ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, মানস দাবি করেছেন, শ্রাবন্তী আগেই ডাক্তার দেখানোর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলেন। তিনি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত, শারীরিক অসুস্থতা আগেও ছিল। এই পরিস্থিতিতে কলেজ পরিচালন সমিতিতে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী প্রতিনিধি নির্বাচন কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।