মানুষের পাশাপাশি এবার পশুদের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার দিকে আরও একধাপ এগোল শিলিগুড়ি। কলকাতার পরে এবার শিলিগুড়ি পুরসভা পথকুকুর ও পোষ্য পশুদের জন্য নির্মাণ করছে বিশেষ শ্মশান। শুধু তাই নয়, পুর এলাকার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে চালু হল পশুদের জন্য এক আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্রও।
আরও পড়ুন: পথ কুকুরকে খাওয়ানোর দায়িত্ব স্কুলগুলির, রাজ্যের নির্দেশে উঠছে প্রশ্ন
পুরসভার এই চিকিৎসাকেন্দ্র মূলত পথকুকুরদের জন্য হলেও ধাপে ধাপে পোষ্য কুকুর, বেড়ালের চিকিৎসার ব্যবস্থাও থাকবে। বিশেষ করে স্টেরিলাইজেশন কর্মসূচির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হতে চলেছে। পুর এলাকাজুড়ে কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাও বেড়েছে। সেই সমস্যা সমাধানে একদিকে যেমন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে চিকিৎসা ও পরিচর্যার ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হচ্ছে। এই দ্বিমুখী পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন পশুপ্রেমীরা। এখানেই থেমে থাকছে না শিলিগুড়ি পুরসভার পরিকল্পনা। একই চত্বরে তৈরি হতে চলেছে পশুদের জন্য একটি কাঠের চুল্লি নির্ভর শ্মশান। মেয়রের কথায়, ‘প্রথমে বৈদ্যুতিক চুল্লির কথা ভাবা হয়েছিল, কিন্তু তা ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হয়। এত সংখ্যক মৃত পশু না থাকায় সেই পরিকল্পনা আর্থিকভাবে অবাস্তব হয়ে দাঁড়ায়। তাই কাঠের চুল্লি ব্যবহারের দিকেই ঝোঁক।’
প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত পথ দুর্ঘটনায় মৃত পশুদের দেহ টেনে নিয়ে গিয়ে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলে দেওয়া হত অথবা মাটি চাপা দেওয়া হত। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের পোষ্য প্রাণী মারা গেলে সম্মানজনকভাবে সৎকারের ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ মানুষ পড়তেন চরম অসুবিধায়। নতুন এই উদ্যোগ সেই সমস্যারই স্থায়ী সমাধান এনে দেবে বলে মত স্থানীয় বাসিন্দা ও পশুপ্রেমীদের। পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডাম্পিং গ্রাউন্ড ঘিরে বড়সড় উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৬৪ কোটি টাকার বায়ো-মাইনিং প্রকল্প চলছে সেখানে। আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে গোটা এলাকাকে সাজিয়ে তোলা হবে ফুলের বাগানে। সেখানে থাকবে পশু চিকিৎসালয়, শ্মশান, গাড়ি মেরামতির ওয়র্কশপ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নানা সুবিধা।
এই প্রকল্পে পাম্পিং স্টেশনও নির্মাণ করা হয়েছে, যার সাহায্যে পুরসভার আবর্জনা বহনকারী গাড়িগুলি ধুয়ে পরিষ্কার রাখা হবে। সব মিলিয়ে পুরো পরিকল্পনার জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রায় সওয়া দুই কোটি টাকা। শিলিগুড়ির পশুপ্রেমী সংগঠনের বক্তব্য, পুরসভার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। যারা প্রাণী ভালোবাসেন, তারা বোঝেন মৃত পোষ্যের সৎকার কতটা কঠিন কাজ। এই শ্মশান তৈরি হলে অনেক মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে।