বাড়ির কর্তার মৃত্যুশোকে ঘরবন্দি ২২ দিন, উদ্ধার করেও হল না শেষরক্ষা, মারা গেল ছেলে
1 মিনিটে পড়ুন Updated: 28 Feb 2024, 07:05 PM ISTChiranjib Paul
প্রায় ২২ দিন ধরে না খেয়ে এভাবে ছিলেন তিনজনে। প্রতিবেশীরা জানতে পারেননি কেউই। সৌরভ তার এক আত্মীয়কে ফোন করে শুধু জানিয়েছিলেন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন।
এই বাড়িতেই থাকতেন সৌরভরা
শেষরক্ষা হল না, মৃত্যু হল অসুস্থ সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের। যিনি মৃত্যুর অপেক্ষায় গত ২২ দিন ধরে না খেয়ে ছিলেন মা ও বোনকে নিয়ে। উত্তরপাড়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাজেন্দ্র এভিনিউ থার্ড লেনের গগন ভিলার বাসিন্দা শ্যামলী মুখোপাধ্যায়(৭৮) তাঁর ছেলে সৌরভ (৫৫) ও মেয়ে নন্দীতা (চুমকি ৫০) মুখোপাধ্যায় নিজেদের গৃহবন্দী করেছিলেন গত বেশ কয়েকদিন ধরে। প্রায় না খেয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরছিলেন তিনজনই। এক আত্মীয় খবর পেয়ে তাঁদের বাড়িতে যান। বাড়িতে তিনজনকে ওই অবস্থায় দেখে তিনি স্থানীয় কাউন্সিলারকে খবর দেন। চেয়ারম্যানের সহযোগিতার তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রায় ২২ দিন ধরে না খেয়ে এভাবে ছিলেন তিনজনে। প্রতিবেশীরা জানতে পারেননি কেউই। সৌরভ তার এক আত্মীয়কে ফোন করে শুধু জানিয়েছিলেন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন। সেই আত্মীয় বৈষ্ণবদাস মুখোপাধ্যায় কিছু একটা হয়েছে আন্দাজ করে উত্তরপাড়ায় আসেন ৪ ফেব্রুয়ারি। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল।
ওই আত্মীয় বলেন,'গৃহকর্তা গগন মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর থেকে মানসিক অবসাদ তৈরী হয় পরিবারের।বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দেন তারা।কারও সঙ্গে যোগাযোগও ছিল না। মাস খানেক না খেতে পেয়ে এভাবেই হয়ত পড়ে ছিলেন। আমাকে ফোন করে সৌরভ একদিন বলে দাদা আমার শরীর খুব খারাপ।এক মাস আমরা কিছু খাইনি। একবার আসবে। আমি আসতে চাইলে বলে আজ পূর্ণিমা কাল এসো। তা সত্ত্বেও আমি আসি। দরজা খোলেনা।এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকি তারপর কড়া নাড়ি। দরজা খুলেই বসে পরে।বলে আর দু'দিন বাঁচব। আমি বলেছিলাম তুই যদি মারা যাস মা বোনকে কে দেখবে।'
গত সোমাবার আবার আসেন বৈষ্ণব বাবু। দরজা বন্ধ থাকায় ভিতর থেকে সাড়া না পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যানকে খবর দেন তিনি। পুলিশ ডাকেন চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব। উত্তরপাড়া থানার পুলিশ তিনজনকে উদ্ধার করে উত্তরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তাঁদের। আজ বুধবার ভোর রাতে মৃত্যু হয় সৌরভের। তার মা কিছুটা সুস্থ হলেও বোনের অবস্থা এখনো সংকটজনক।
মৃত্যুর খবর পেয়ে চেয়ারম্যান দিলীপ যাবদ রাজেন্দ্র এভিনিউ এর ওই বাড়িতে যান।মৃতের পরিচয় পত্র সংগ্রহ করে হাসপাতালে যান। শেষকৃত্যের যাবতীয় ব্যবস্থা করেন।
চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব বলেন, 'এই ধরনের মৃত্যুতে নিজেদের অপরাধী মনে হয়।আমাদের পাড়ার একজন মানুষ তারা কতদিন বাড়ি থেকে বের হননি। কোনও প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলেননি কেউ জানতে পারেনি।সমাজে বা প্রশাসনের কারো কাছে কোন সাহায্য চাননি এটা আমাদের কাছে খুব কষ্টের। সমাজের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ যারা শুনবে তাদের কাছে খুবই কষ্টের মনে হবে।আমরা যখন জানতে পেরেছি তারপর কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি।গগন বাবুর স্ত্রী এবং মেয়ের চিকিৎসা চলছে আশা করব তারা সুস্থ হয়ে উঠবেন।'