উত্তর গাজায় যে শেষ বড় চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্রটি ছিল, এবার সেটিও অচল হয়ে গেল। শুক্রবার কামাল আদওয়ান হাসপাতাল লাগোয়া এলাকায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায় ইজরায়েলের সেনা। তার জেরেই ওই হাসপাতালে পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর পক্ষ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে হু-এর তরফে এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করা হয়। তাতে লেখা হয়েছে, 'প্রাথমিকভাবে যে তথ্য সামনে এসেছে, তা হল - এই অভিযানে হাসপাতালের কয়েকটি প্রধান বিভাগ মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়েছে। এবং সেগুলি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।'
যদিও এই হামলা প্রসঙ্গে ইজারায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি হল, ওই হাসপাতাল ‘বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের একটি প্রধান ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। এবং সেটিকে লাগাতার নিজেদের গোপন ডেরা হিসাবে ব্যবহার করছিল সন্ত্রাসবাদীরা।’
ইজরায়েলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে এই দাবি করা হয়েছে। গত অক্টোবর মাস থেকে উত্তর গাজায় সীমান্ত অভিযান শুরু করেছে তারা।
অন্যদিকে, হু-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং ২৫ জন গুরুতর অসুস্থ রোগী এখনও ওই হাসপাতালে রয়েছেন। তাঁদের মধ্য়ে কয়েকজনকে ভেন্টিলেটরে পর্যন্ত রাখা হয়েছে।
এদিকে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ইজরায়েলের এই সেনা অভিযানের ফলে অল্প অসুস্থ থেকে আশঙ্কাজনক, সমস্ত রোগীই হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়েও রাষ্ট্রসঙ্ঘের পক্ষ থেকে 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর থেকে উত্তর গাজায় স্থলপথে ও আকাশপথে হামলার পরিমাণ আরও বাড়িয়েছে ইজরায়েল। তাদের যুক্তি, হামাস জঙ্গিরা যাতে ফের জোট বাঁধতে না পারে, তার জন্যই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।।
শুক্রবারের হামলা নিয়ে ইজরায়েলের সাফাই হল, তাদের কাছে গোয়েন্দা সূত্র মারফত খবর এসেছিল, ওই হাসপাতাল এবং তার আশপাশে জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়েছে। সেই কারণেই সেখানে সন্ত্রাসদমন অভিযান চালানো হয়।
ইজরায়েলি সেনার আরও দাবি, এই অভিযান চালানোর আগেই তারা সেখান থেকে সাধারণ নাগরিক, রোগী এবং চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সকলকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করে দেয়।
যদিও ইজরায়েলি সেনার এইসব দাবি মানতে নারাজ হু। তাদের বক্তব্য, 'আমরা ওই অঞ্চলে ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবাটুকু বহাল রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু, এই ধরনের হামলা ও অভিযান আমাদের সেই প্রচেষ্টাও ভেস্তে দিচ্ছে। এভাবে প্রথাগত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার অর্থ হল, সেই ১০ হাজার প্যালেস্তেনীয়র জন্য কার্যত মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার সমতুল্য। কারণ, তাঁদের একান্তভাবেই চিকিৎসা পরিষেবা দরকার।'