কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পেল নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল। সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে সংসদে সংশোধনী বিল পেশ করতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
ক্ষমতায় এসে সারাদেশেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি চালু করার কথা একাধিকবার ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই শেষ হবে সেই কাজ। তবে তার আগে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী পাশ করাতে চাইছে কেন্দ্র। বিলে বলা হয়েছে, ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে যে ছ’টি ধর্মের (হিন্দু, খ্রিশ্চান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি) মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। যদিও মুসলিমরা সেই সুযোগ পাবেন না।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের দাবি, পড়শি দেশগুলির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় কারণে নিপীড়ন চালানো হয়। তাই বাধ্য হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তাঁরা। তাঁদের বিচার দেওয়ার দায়িত্ব ভারতের। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। এই সংশোধনীর ফলে সর্ব ধর্ম সম্ভবের ফলে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে ভারত বলে দাবি করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
যদিও সরকারের এই যুক্তি মানতে রাজি নয় বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করা ভারতের সংবিধানের মূল ধারার পরিপন্থী। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলি ইতিমধ্যে সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। বিরোধিতা এসেছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি থেকেও। অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মণিপুরে বিলের বিরোধিতায় রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের আপত্তির কারণ হল, বছরের পর বছর ধরে হিন্দুরা উত্তর-পূর্বে গিয়ে বসবাস করছেন। ‘বিদেশি’-দের নাগরিকত্ব দিলে সেই প্রবণতা আরও বাড়বে। ফলে উত্তর-পূর্ব বিভিন্ন সম্প্রদায়ের গুরুত্ব কমে যাবে। এনিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভায় বিরোধীরা হই-হট্টগোল করলেও বিল পাশ করাতে সরকারকে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। কিন্তু, তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জের জায়গা হবে রাজ্যসভা। সেখানে সরকারের কাছে বিল পাশের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যা নেই। তাই এআইডিএমকে, জেডিইউয়ের মতো দলগুলির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে কেন্দ্রকে।
প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের প্রথম জমানায় লোকসভায় সংশোধনী বিলটি পাশ হয়েছিল। তবে বিরোধীদের চাপের মুখে বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করতে পারেনি সরকার। এরইমধ্যে লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিলটি বাতিল হয়ে যায়।