'বিশ্বকে ফের বোকা বানানোর চেষ্টা করছে পাকিস্তান।' বালোচিস্তান প্রদেশে স্কুলবাসে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের ঘটনায় পাকিস্তান যে ভারতের উপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছিল, তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। যথারীতি নিজেদের ‘সুনাম’ বজায় রেখে অভিযোগের স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ দেয়নি। বুধবার সকালে পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশের খুজদার জেলায় একটি স্কুলবাসে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩ শিশু, বাসচালক ও তাঁর সহকারী রয়েছেন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন। আর ঘটনার পরেই এই হামলায় ভারতের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তোলে পাকিস্তান। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' ও 'বিভ্রান্তিকর' বলে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে ভারত।
ইসলামাবাদের অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, 'খুজদারে হামলার ঘটনায় ভারতের জড়িত থাকার যে অভিযোগ পাকিস্তান করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এই ঘটনায় প্রাণহানির জন্য ভারত শোকপ্রকাশ করছে। তবে পাকিস্তান তার নিজস্ব ব্যর্থতা ও বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের পরিচয় আড়াল করতে, তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্ত সমস্যার জন্য ভারতকে দায়ী করা স্বভাবে পরিণত করেছে। বিশ্বকে বোকা বানানোর এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।'
এর আগে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখা জানিয়েছিল, 'এই কাপুরুষোচিত ভারত-প্রভাবিত হামলার পরিকল্পনাকারী, সহায়তাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে।'এরপরেই নয়াদিল্লির দাবি, পাকিস্তান নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি থেকে দৃষ্টি সরাতে এবং আন্তর্জাতিক মহলের মনোযোগ ঘোরাতে নিয়মিতভাবে ভারতের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলে।
এখনও পর্যন্ত কেউ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। বালোচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগটি জানান, আর্মি পাবলিক স্কুলের ওই বাসটি সকালে শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছিল, তখনই গাড়ি-আইইডি বিস্ফোরণে হামলা হয়। তিনি আরও জানান, মারাত্মক আহত শিক্ষার্থীদের কুইটায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।পাক পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ইয়াসির ইকবাল দাস্তি বলেন, ‘স্কুলবাসটি খুজদার জিরো পয়েন্টের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। সে সময়েই আচমকা বিস্ফোরণটি ঘটে।' মৃতদেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে রয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
বালোচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। সম্প্রতি আবারও হামলার ঘটনা বেড়েছে। গত কয়েক মাসে পাকিস্তানের পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর উপর একাধিক হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। গত কয়েক মাসে কাচ্চি বোলানে ট্রেন ছিনতাই, কোয়েটায় আধাসেনা ফ্রন্টিয়ার কোরের গাড়িতে আইইডি বিস্ফোরণ, নোশকিকে সেনা কনভয়ে আত্মঘাতী হামলার মতো নতুন কৌশলে হানাদারি চালিয়েছে বিএলএ। রবিবারও বালোচিস্তানের কিল্লা আবদুল্লা জেলার জব্বর মার্কেটে এক বিস্ফোরণে চার জনের মৃত্যু হয়। তবে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা সেখানে বিরল। এটি বালোচিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি বলে মনে করা হচ্ছে।