‘নিসার উপগ্রহ হল বিশ্বের সঙ্গে ভারতের বৈজ্ঞানিক মেলবন্ধন।' এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ড. জিতেন্দ্র সিং। নাসা ও ইসরোর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ‘নিসার’ কৃত্রিম উপগ্রহটি বুধবার শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে মহাকাশে পাঠানো হবে। জিএসএলভি মার্ক-২ রকেটের মাধ্যমে এই উৎক্ষেপণ হবে।
সূত্রের খবর, এটি বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ যা ‘দ্বৈত ফ্রিকোয়েন্সির রেডার (এল-ব্যান্ড ও এস-ব্যান্ড)’ ব্যবহার করে পৃথিবীর পরিবেশ, বনভূমি, হিমবাহ, ভূকম্পন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ পর্যবেক্ষণ করবে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মিলিত উদ্ভাবনী ক্ষমতার পরিচয় বহন করে। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ‘নিসার’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। নিসার কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেন, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাসা-র পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণের প্রথম যৌথ উদ্যোগ এটি। নিসার মিশনকে ভারতের আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডে একটি রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসিত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-'অপারেশন সিঁদুর' বিতর্কে ব্রাত্য শশী-মনীশ! কংগ্রেসের অন্দরে চাপানউতোর
তিনি আরও বলেন, '৩০ জুলাই শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে নিসার উপগ্রহের উৎক্ষেপণ ইসরোর আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে আরও উন্নত করবে।' একই সঙ্গে এই মিশনের তাৎপর্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, 'এই মিশন কেবল একটি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ নয় - এটি এমন একটি মুহূর্ত যা বিজ্ঞান এবং বিশ্ব কল্যাণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দুটি গণতন্ত্র একসঙ্গে কী অর্জন করতে পারে তার প্রতীক। নিসার কেবল ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেবা করবে না বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলির জন্য, বিশেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কৃষি এবং জলবায়ু পর্যবেক্ষণের মতো ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে।' তিনি আরও বলেন, 'নিসার কৃত্রিম উপগ্রহ বাস্তুতন্ত্রের উপর ক্রমাগত নজরদারি করবে এবং ভূমিকম্প, সুনামি, আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত ও ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি মূল্যায়ন করতে সাহায্য করবে। এটি পৃথিবীর গতিবিধি এমনকি সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলিও ট্র্যাক করবে। এই উপগ্রহের তথ্য উপকূলরেখা পর্যবেক্ষণ, ঝড় ট্র্যাকিং, ফসলের ম্যাপিং এবং মাটির আর্দ্রতার পরিবর্তনের জন্যও কাজে লাগানো হবে - যা সরকার, গবেষক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
আরও পড়ুন-'অপারেশন সিঁদুর' বিতর্কে ব্রাত্য শশী-মনীশ! কংগ্রেসের অন্দরে চাপানউতোর
ভারত ও মার্কিন মহাকাশ সংস্থার যৌথ উদ্যোগে নির্মিত পৃথিবী পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ নাসা-ইসরো সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (নিসার) ৩০ জুলাই ভারতের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দ্বারা উৎক্ষেপিত হবে বলে জানিয়েছেন ইসরোর চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন। ২,৩৯২ কেজি ওজনের এই উপগ্রহটি ৭৪০ কিমি উচ্চতায় পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হবে। এটি ২৪২ কিমি এলাকা জুড়ে নজরদারি করতে পারবে, সব রকম আবহাওয়ায়, ২৪ ঘণ্টা। নারায়ণন জানান, ধস নির্ণয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনের উপরে নজরদারি-সহ নানা কাজে এটি কার্যকর হবে। এই উপগ্রহ শুধু ভারত বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, সমগ্র বিশ্বের উপকারে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এই উপগ্রহের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এটি ১২ দিনের মধ্যে পুরো পৃথিবীর মানচিত্র মেপে নিতে সক্ষম এবং পৃথিবীর পরিবেশে সময়ের সাথে কী কী পরিবর্তন ঘটছে তা ধারাবাহিকভাবে রেকর্ড করতে পারবে। এটি একসঙ্গে স্থানের এবং সময়ের ভিত্তিতে তথ্য সরবরাহ করবে, যা আগামীর বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে এক বিশাল মাইলফলক।ইসরো জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের পর প্রথম ৯০ দিন উপগ্রহটি থাকবে কমিশনিং ফেজে, যা ইন-অর্বিট চেকআউট নামেও পরিচিত। এই সময় উপগ্রহের সমস্ত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে নেওয়া হবে।