বিতর্কের একশেষ। এবার দিঘার জগন্নাথ মূর্তিতে ব্যবহৃত নিমকাঠ নিয়ে কড়া অবস্থান নিল ওড়িশা সরকার।
পিটিআই সূত্রে খবর, পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রশাসন দিঘার মন্দিরে মূর্তি তৈরির জন্য পুরীর মন্দিরের উদ্বৃত্ত পবিত্র কাঠ ব্যবহারের অভিযোগে একজন প্রবীণ সেবায়েতকে কারণ দর্শানোর কারণ জারি করেছে। শোকজ করা হয়েছে ওই সেবাতেয়তকে।
প্রশাসনের তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে ভগবান জগন্নাথের ‘অগণিত ভক্ত ও উপাসকদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করা’ এবং মন্দিরের ‘মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার’ অভিযোগে দয়িতাপতি নিজোগের সচিব এবং প্রবীণ সেবায়েত রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্রকে নোটিশ জারি করা হয়েছে।
'দয়িতাপতি নিযোগ' জগন্নাথদেবের দেহরক্ষী হিসাবে বিবেচিত সেবায়েতদের একটি দল।
৪ মে থেকে সাত দিনের মধ্যে দশমহাপাত্রকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পেলে ১৯৫৫ সালের শ্রী জগন্নাথ মন্দির আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩০ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দিঘা মন্দিরে অভিষেক অনুষ্ঠানে দাসমহাপাত্র সহ পুরীর আরও ৫৫ জন সেবায়েত উপস্থিত ছিলেন।
দাসমহাপাত্র দিঘা মন্দিরের জন্য ভগবান বলভদ্র, দেবী সুভদ্রা এবং ভগবান জগন্নাথের মূর্তি তৈরি করতে 'দারু গৃহে' সংরক্ষিত পুরী মন্দিরের পবিত্র কাঠ ব্যবহার করেছিলেন এবং সেগুলি স্থাপনের জন্য দীঘা মন্দিরে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে দাসমহাপাত্র একটি বাংলা নিউজ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন যে তিনি দিঘা মন্দিরের মূর্তি তৈরির জন্য পুরী মন্দিরের পবিত্র কাঠ ব্যবহার করেছিলেন, এবং পরে তিনি ওড়িশা মিডিয়ায় তা অস্বীকার করেছিলেন।
তবে ওই দয়িতাপতির দাবি, তিনি অন্য একটি নিম গাছ ব্যবহার করে কাঠের দেবদেবী তৈরি করেছেন।
দয়িতাপতি নিযোগের সচিবের দায়িত্বে থাকা প্রবীণ সেবায়েতের কাজ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এসজেটিএ।
পুরীর মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে, 'নবকলেবর' উৎসবের পরে উদ্বৃত্ত কাঠ একটি ঘরে সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজনে মূর্তি মেরামতের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বেশ কয়েকটি ধর্মীয় কর্মকাণ্ড অনুসরণ করে 'বনজোগা' অনুষ্ঠানের সময় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঠ সংগ্রহ করা হয়।
তাই 'নবকলেবরের'র সময় যে কাঠ সংগ্রহ করা হয়, তা পবিত্র ও বিরল বলে মনে করা হয় বলে জানিয়েছেন এক পুরোহিত।
দশমহাপাত্রের পরস্পরবিরোধী মন্তব্য ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে কারণ তাঁর মন্তব্য 'তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার দিঘা মন্দিরকে 'জগন্নাথ ধাম' হিসাবে চিত্রিত করা এবং সেখানে মূর্তি নির্মাণে পুরী মন্দিরের উদ্বৃত্ত কাঠ ব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন ২ মে এসজেটিএকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছিলেন।
রবিবার এসজেটিএর প্রধান প্রশাসক অরবিন্দ পাধি দশমহাপাত্রকে ডেকে প্রায় ৯০ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
দয়িতাপতি নিযোগের সম্পাদক হিসেবে তিনি পুরী মন্দির থেকে পবিত্র কাঠ নিয়ে গিয়ে দিঘা মন্দিরের মূর্তি তৈরিতে তা ব্যবহার করেছিলেন কি না, তা জানতে চায় প্রশাসন। খবর সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ইতিমধ্য়েই জানিয়ে দিয়েছেন, আমাদের চুরি করতে হয় না। চুরি বিদ্যা ভয়ঙ্করী যদি সে পড়ে ধরা। যারা চোর…চোরের মায়ের বড় গলা। তুমি যদি হিন্দু ধর্মের সমর্থক হও, মমতা ব্যানার্জি নিমকাঠ চুরি করে জগন্নাথধাম করেছে মমতা ব্যানার্জির এই অবস্থা হয়নি। আমাদের মূর্তি তো মার্বেলের ছিল। আমাদের বাড়িতেই তো আছে। আপনাদের অনেকের বাড়িতেই আছে। ওটা নিয়ে এসেছেন দ্বৈতপতি। যে জায়গা থেকে বলা হচ্ছে সেই জায়গা থেকে নয়। তাকে ডাকা হয়েছিল শুনেছি। তিনি স্ট্রেট বলে দিয়েছেন, তোমরা যেটা বলেছ সেটা নয়। আমি আমার অন্য জায়গা থেকে করেছি।