ছত্তিশগড়ের বিজাপুরে প্রায় একমাস আগেই পেতে রাখা হয়েছিল মৃত্যুফাঁদ! আর সেই 'ফাঁদে পা দিয়ে'ই প্রাণ হারাতে হল নিরাপত্তাবাহিনীর আটজন কর্মী এবং একজন সাধারণ নাগরিককে।
বিজাপুরের আইইডি বিস্ফোরণের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ছত্তিশগড়ের এই এলাকায় এখনও চরম বামপন্থীদের রমরমা রয়েছে। সেই কারণেই এখানে মাঝেমধ্য়েই আইইডি-সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণঘাতী বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। গত সোমবার যে বিস্ফোরণটি ঘটেছিল, তথ্য বলছে - যে আইইডি বিস্ফোরণ এতগুলি জীবন কেড়ে নিল, সেই আইইডি পুঁতে রাখা হয়েছিল প্রায় একমাস আগে!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, 'সোমবার বিস্ফোরণের ঘটনা যে আইইডি ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে মাস খানেক আগে পুঁতে রাখা হয়েছিল। কারণ, যে রাস্তায় এই বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে প্রচুর পরিমাণে ঘাস গজিয়ে গিয়েছিল। এবং অন্য়ান্য গাছও জন্মেছিল। ঘটনাস্থল থেকে যে তার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তা অন্তত কয়েক সপ্তাহ আগে লাগানো হয়েছিল।'
ওই পুলিশকর্তার মতে, 'আসলে মাওবাদীরা আগে থাকতেই আইইডি পুঁতে রাখছে। তারপর যখনই মনে করছে, তাতে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। সারা বিজাপুর জেলায় এমন অন্তত কয়েক আইইডি পাওয়া যাবে। যেগুলি মাওবাদীরা পুঁতে রেখে দিয়েছে।'
মাওবাদীদের পুঁতে রাখা আইইডি উদ্ধার সংক্রান্ত পুলিশের একটি তথ্যতালিকা হিন্দুস্তান টাইমস-এর হাতে এসে পৌঁছেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে সারা রাজ্যে মোট যত পরিমাণ আইইডি উদ্ধার করা হয়েছে, তার ৫০ শতাংশই পাওয়া গিয়েছে বিজাপুর জেলায়।
সেই হিসাব অনুসারে, ২০২৪ সালে সারা ছত্তিশগড়ে মোট ২৬০টি আইইডি উদ্ধার করা হয়েছিল। যার মধ্যে বিজাপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১০৫টি আইইডি। এই তালিকায় দু'নম্বরে নাম রয়েছে - সুকমার। সেখানে গত বছর মোট ৮০টি আইইডি উদ্ধার করা হয়েছে।
বিভিন্ন জায়গায় উদ্ধার হওয়া এই আইইডি-র পরিমাণ ১ কিলোগ্রাম থেকে ৩০ কিলোগ্রামের মধ্য়ে। নিরাপত্তাকর্মীদের আশঙ্কা, গত সোমবার বিজাপুরে যে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে অন্তত ২০ থেকে ৩০ কিলোগ্রাম আইইডি ব্যবহার করা হয়েছে।
রাজ্যের মোট সাতটি জেলা থেকে মাওবাদীদের উপদ্রবের খবর সামনে আসছে। এই জেলাগুলি হল - বাস্তার, দান্তেওয়াড়া, বিজাপুর, কাঙ্কের, নারায়ণপুর, কোন্দাগাঁও এবং সুকমা। যদিও এর মধ্য়ে বাস্তার এবং কোন্দাগাঁও জেলা দু'টিকে রাজ্য সরকারের তরফে মাওবাদীমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
গত সোমবারের বিস্ফোরণ নিয়ে কেন গোয়েন্দাদের তরফে আগেভাগে কোনও তথ্য পাওয়া গেল না, তা নিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর অন্দরেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে এক অনিচ্ছুক এক সিআরপিএফ আধিকারিক বলেন, 'কুতরু-বেদরে সড়কে যে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটল, যার জন্য ৯ জনকে নিজের জীবন খোয়াতে হল, সেই ঘটনায় আইইডি পুঁতে রাখার বিষয়ে আমরা যে আগে থেকে কোনও গোয়েন্দা রিপোর্ট পাইনি, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। এটা অবশ্যই ব্যর্থতা।'
ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, ওই বিস্ফোরণের মাত্র 'চারদিন আগেই নিরাপত্তাবাহিনী বিজাপুরের দু'টি থানা এলাকা থেকে মোট ১০টি আইইডি উদ্ধার করেছিল। ওই আইইডি-গুলিও রাস্তার নীচেই পুঁতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু, সেগুলি ততটা শক্তিশালী ছিল না, যতটা শক্তিশালী আইইডি সোমবারের বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেগুলির ওজন ছিল ১ থেকে ৩ কেজির মধ্যে।'