বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সম্প্রতি তোপ দেগে বিস্ফোরক সব মন্তব্য করেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। এরপর আরও একাধিক বিজেপি নেতা এই নিয়ে নিশিকান্তরে সমর্থন করেছেন। তবে বিজেপি এই সব মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রেখেছে দলগত ভাবে। এই আবহে এবার নিশিকান্ত দুবের সেই অভিযোগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। আজ পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিতে দাখিল রিট পিটিশনের উল্লেখ করা হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি বিআর গভাই এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন। (আরও পড়ুন: ওয়াকফ হিংসার জেরে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি, রিটের উল্লেখ SC-তে, শুনানি কাল)
আরও পড়ুন: পড়শি রাজ্যে খতম ৮ মাওবাদী, মৃত এক নকশালের মাথার দাম আবার ছিল ১ কোটি!
বিচারপতি বিআর গভাই বেন, 'আপনি চান যাতে আমরা একটা রিট ইস্যু করে রাষ্ট্রপতিকে এর (পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন) নির্দেশ দিই? ইতিমধ্যেই আমাদের বিরুদ্ধে নির্বাহী শাখায় এক্তিয়ার বহির্ভূত ভাবে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। তাই প্লিজ...' এর জবাবে অ্যাডভোকেট বিষ্ণু শঙ্কর জৈন অবশ্য জানান, এই আবেদনটা আগামিকাল শুানানির জন্যে তালিভুক্ত হয়ে আছে। উল্লেখ্য, আগামী মাসেই ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেবেন জাস্টিস বিআর গভাই। এই অবস্থায় তাঁর থেকে এহেন মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। (আরও পড়ুন: দিল্লিতে ঊষা ভান্স, সূচিতে না থাকলেও অন্ধ্রের পৈতৃক গ্রাম অপেক্ষায় বসে তাঁর)
উল্লেখ্য, এর আগে ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চলা মামলার শুনানির আবহে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। এদিকে শুধু ওয়াকফ নয়, সম্প্রতি রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির বিল সই নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন নিশিকান্ত। এই নিয়ে গত ১৯ এপ্রিল বার্তাসংস্থা এএনআইকে নিশিকান্ত দুবে বলেছিলেন, 'দেশে ধর্মীয় যুদ্ধ উস্কে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট দায়ী। সুপ্রিম কোর্ট তার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যদি সবকিছুর জন্য সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়, তাহলে সংসদ এবং রাজ্যের বিধানসভাগুলি বন্ধ করে দেওয়া উচিত।' (আরও পড়ুন: ঝাড়খণ্ডে কর্ণি সেনার রাজ্য সভাপতিকে খুন, দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মাঠে পড়ে দেহ)
এরই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টকে তোপ দেগে তিনি আরও বলেছিলেন, 'নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে আপনি কীভাবে নির্দেশনা দিতে পারেন? রাষ্ট্রপতি ভারতের প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করেন। সংসদ এই দেশের আইন প্রণয়ন করে। আপনি কি সেই সংসদকে নির্দেশ দেবেন?... আপনি কীভাবে একটি নতুন আইন তৈরি করছেন? কোন আইনে লেখা আছে যে রাষ্ট্রপতিকে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে? এর মানে হল আপনি এই দেশকে অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে চান। যখন সংসদ বসবে, তখন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।' এদিকে বিজেপির অপর সাংসদ দীনেশ শর্মা আবার বলেন, 'লোকসভা ও রাজ্যসভাকে নির্দেশনা দেওয়ার এক্তিয়ার নেই কারও।'
পরে অবশ্য জেপি নড্ডা এক বিবৃতি জারি করেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তিনি তাতে বলেছিলেন, 'ভারতীয় জনতা পার্টি সর্বদা বিচার বিভাগকে সম্মান করে এসেছে এবং সবসময়ই বিচার ব্যবস্থার আদেশ ও পরামর্শ গ্রহণ করে দল। কারণ একটি দল হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে সুপ্রিম কোর্ট সহ দেশের সমস্ত আদালত আমাদের গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সংবিধানের সুরক্ষার শক্তিশালী স্তম্ভ। আমি তাদের দুজনকেই (নিশিকান্ত দুবে এবং দীনেশ শর্মা) এবং অন্য সকলকে এই ধরনের বক্তব্য না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।' তবে বিতর্ক এতে থামছে না। বিজেপির অন্দরে নিশিকান্তের বুলি শোনা যাচ্ছে অনেকেরই মুখে। বিরোধীরা আবার অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সাংসদ ও বিধায়করা আদতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।