শিশু অবস্থায় অপহরণ হয়েছিলেন। কোনওভাবে অপহরণকারীদের হাত থেকে পালিয়ে ৩১ বছর পর ফিরেছিলেন উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের বাড়িতে। ঘরের ছেলে ঘরে ফেরায় আনন্দের শেষ ছিল না পরিবারে। ফেরার পর অপহরণ এবং অত্যাচারের কথা সকলকেই জানিয়েছিলেন ভীম সিং ওরফে রাজু নামে ওই যুবক। কিন্তু, পরিবারের সেই আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হল না। একটি বিষয় সামনে আসতেই অবাক পুলিশ থেকে শুরু পরিবারের সকলে। আসলে ওই যুবকের সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। সেই অনুযায়ী বেশ কয়েক মাস আগেই ওই যুবক উত্তরাখণ্ডের একটি পরিবারেও একইভাবে ফিরে গিয়ে নিজের পরিবার বলে দাবি করে। এই অবস্থায় প্রতারণার গন্ধ পেতেই পুলিশ যুবককে গ্রেফতার করেছে।
আরও পড়ুন: ৪ বছর নিখোঁজ মিলনকে পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দিল সাইক্লোন রেমাল
রাজু দিন কয়েক আগেই গাজিয়াবাদের ওই পরিবারে আচমকা ফিরে এসে দাবি করেছিলেন ৯ বছর বয়সে স্কুল থেকে ফেরার পথে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল। তার সঙ্গে ছিল তার দিদি। তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজস্থানের জয়সালমেরে। এত বছর ধরে সেখানেই বিনা পারিশ্রমিকে তাঁকে খতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তার বদলে তাঁকে ডাল-রুটি দেওয়া হতো এবং পশুর মতো আচরণ করা হতো। সংবাদমাধ্যমের সামনেও, ভীম সিং এই দাবি করেছিলেন। তবে উত্তরাখণ্ডের বিষয়টি সামনে আসতেই হতবাক হয়ে যায় পুলিশ।
সহেবাবাদের সহকারী পুলিশ কমিশনার রজনীশ কুমার উপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজু যখন থানায় আসেন তখন তিনি তাঁর ঠিকানা শনাক্ত করতে পারেননি। বিভিন্ন তথ্য খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পারে, যে ৫ মাস আগেই উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে ওই ব্যক্তি আরেকটি পরিবারে ফিরেছিলেন। সেখানেও তিনি নিজেকে মনু শর্মা বলে পরিচয় দিয়েছিল। জানা যায়, ওই পরিবারের সন্তান ১৬ বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছে। সেখানে গিয়ে ওই যুবক নিজেকে বৃদ্ধ দম্পতির সন্তান বলে দাবি করেছিলেন। উত্তরাখণ্ডের বৃদ্ধ বাবা-মা সেই সময় যুবককে তাদের ছেলে ভেবে বুকে টেনে নিয়েছিলেন। সেই ছবি পেয়েছে পুলিশ। সেখানেও তিনি একইভাবে অপহরণের গল্প বলেছিলেন।
তবে উত্তর প্রদেশের বিষয়টি দেরাদুনের বুদ্ধ দম্পতি নজরে আসতেই সত্যি সামনে আসে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেরাদুনের বৃদ্ধা আশা শর্মা যখন ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পারেন তখন তিনি বলেন, ‘আমি জুলাই মাসে যখন তাকে দেখেছিলাম তখন আমি জানতাম যে সে আমার ছেলে। এত বছর পর তাকে ফিরে পেয়ে আমি আনন্দিত হয়ে ছিলাম। আমরা তাকে আমাদের বাড়িতে স্বাগত জানাই এবং সে একটি সবজি বাজারে কাজ শুরু করে। তবে ২১ নভেম্বর সে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সে আমাদের বলেছিল যে আরও ভাল কাজের খুঁজতে যাচ্ছে। দিল্লি পৌঁছানোর ফোন করার কথা বললেও আর করেনি।’
তবে রাজুকে নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল আশার স্বামী কপিল দেব শর্মার। তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় সন্দেহ করতাম সে একজন প্রতারক। সে প্রায়ই আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করত এবং এমনকি আমার স্ত্রীকে বলেছিল যে আমাদের নাতিরা যেন আমাদের সঙ্গে না থাকে। এখন গাজিয়াবাদের ঘটনার কথা শুনে, আমি নিশ্চিত যে সে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তাকে গ্রেফতার করা উচিত। যাতে সে অন্য পরিবারের আবেগ নিয়ে খেলতে না পারে।’
দেরাদুনের মানব পাচার বিরোধী ইউনিটের (এএইচটিইউ) প্রধান ইন্সপেক্টর প্রদীপ পান্ত বলেছেন, পুলিশ মামলাটি তদন্ত করতে গাজিয়াবাদের আধিকারিকদের সঙ্গে সমন্বয় রাখছে। এখনও পর্যন্ত, মনে হচ্ছে যে উভয় ক্ষেত্রেই একই ব্যক্তি। তার আসল পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।