'পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শালের পরিবর্তে রাজা উপাধি দেওয়া উচিত ছিল।' নিজের দেশের বর্তমান পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করে এমনই মন্তব্য করেন পাকিস্তানের জেলবন্দি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তাঁর কথায়, পাকিস্তানে এখন জঙ্গলের আইন চলছে।ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের আবহে ইমরানের এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার জেনারেল আসিম মুনিরকে ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে ভূমিকার জন্য ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়। তিনি পাকিস্তানের ইতিহাসে এই পদে উন্নীত হওয়া দ্বিতীয় শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। যা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন ইমরান খান। এক্স বার্তায় প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মাশাআল্লাহ, জেনারেল আসিম মুনির ফিল্ড মার্শাল হয়েছেন। তবে সত্যি বলতে, তাঁকে রাজার উপাধি দেওয়া আরও উপযুক্ত হত- কারণ এখন দেশে জঙ্গলের আইন চলছে। আর জঙ্গলে তো একজনই রাজা হন।'
আরও পড়ুন-পহেলগাঁও হামলার জন্য দায়ী পাক সেনাপ্রধানের দৃষ্টিভঙ্গি! বিস্ফোরক দাবি জয়শংকরের
২০২৩ সালের আগস্ট থেকে একাধিক মামলায় জেলবন্দি ইমরান খান তাঁর সঙ্গে কোনও চুক্তি বা আলোচনার গুজবকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'কোনও চুক্তি হয়নি, কোনও আলোচনাও চলছে না। এগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা।' তবে তিনি সামরিক প্রতিষ্ঠানকে উন্মুক্তভাবে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, যদি তাঁরা সত্যিই পাকিস্তানের স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হন, তবে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাঁর কথায়, 'দেশ বাহ্যিক হুমকি, সন্ত্রাসবাদের উত্থান এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি নিজের জন্য কখনও কিছু চাইনি, এখনও চাই না।'
ইমরান খান শেহবাজ শরিফ সরকারকে ভারতের সম্ভাব্য আরও একটি হামলার বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, পাকিস্তান এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে যেখানে আইন শুধু দুর্বলদের জন্য প্রযোজ্য, ক্ষমতাধরদের জন্য নয়।
ইমরান বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে গণতন্ত্রের চেতনা পিষ্ট হচ্ছে। যখন আপনি বার্তা দেন যে যত বড় চোর, তত উঁচু পদ-তখন আপনি ন্যায়বিচারকে কবর দেন।' ইমরান খান পাক রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারির বোনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে কর্মচারীদের নামে পাঁচটি অ্যাপার্টমেন্ট নিবন্ধনের অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু তিনি বিদেশে থাকায় কেউ তাঁকে প্রশ্ন করার সাহস পায় না। তিনি শেহবাজ শরিফের বিরুদ্ধে ২২ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপির আর্থিক তছরূপের মামলার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'গত তিন বছরে পাকিস্তানের নৈতিক ও সাংবিধানিক কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।'
আরও পড়ুন-পহেলগাঁও হামলার জন্য দায়ী পাক সেনাপ্রধানের দৃষ্টিভঙ্গি! বিস্ফোরক দাবি জয়শংকরের
ইমরান খান তোশাখানা-২ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে চলমান বিচারকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, 'কারাগারের মতোই, আদালতের প্রক্রিয়া একজন কর্নেলের ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। আমার বোন ও আইনজীবীদের আদালতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, আমার সঙ্গীদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না, মাসের পর মাস আমার সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। এমনকী আমার বইও আমার কাছে পৌঁছানো হচ্ছে না, চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটি আদালতের আদেশ ও আইনের ক্রমাগত লঙ্ঘন।'