ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পর পশ্চিম এশিয়ায় ফের যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তার জেরেই সোমবার তীব্র ধস নামল এশিয়ার শেয়ার বাজারে। তেলের দাম ছুঁয়েছে গত পাঁচ মাসের সর্বোচ্চ সীমা। বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের চোখ এখন তেহরানের প্রতিক্রিয়ার দিকে।ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে মার্কিন হামলার ফলে বিশ্বব্যাপী কার্যকলাপ এবং মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় তেলের দাম ২ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে, যা জানুয়ারির পর থেকে সর্বোচ্চ।
আপাতত, ব্রেন্টের দাম তুলনামূলকভাবে ২.৭ শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৭৯.১২ ডলারে দাঁড়িয়েছে। যেখানে মার্কিন অপরিশোধিত তেলের দাম ২.৮ শতাংশ বেড়ে ৭৫.৯৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে। শেয়ার বাজার কিছুটা স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে, এসএন্ডপি ৫০০ ফিউচারের দাম ০.৫ শতাংশ এবং নাসডাক ফিউচারের দাম ০.৬ শতাংশ কমেছে।ইরান বিশ্বের নবম বৃহত্তম তেল উৎপাদক দেশ।দিনে প্রায় ৩৩ লক্ষ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে তেহরান, যার অর্ধেক রফতানি হয়, বাকি যায় দেশের ঘরোয়া চাহিদা মেটাতে। ফলে ইরান যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার পথে যায়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
অন্যদিকে, বিশ্ববাজারে এই অস্থিরতার জেরে সোমবার এশিয়ার শেয়ার সূচকগুলি পড়েছে একের পর এক। জাপানের বাইরে এশিয়া-পেসিফিকের এমএসসিআই-এর বিস্তৃত সূচক ০.৫ শতাংশ কমেছে এবং জাপানের নিক্কেই (টোকিয়ো স্টক এক্সচেঞ্জের স্টক মার্কেট সূচক) ০.৯ শতাংশ কমেছে। ইউরোস্টক্স ৫০ ফিউচারের দাম ০.৭ শতাংশ কমেছে, যেখানে এফটিএসই ফিউচারের দাম ০.৫ শতাংশ এবং ড্যাক্স ফিউচারের দাম ০.৭ শতাংশ কমেছে। ইউরোপ এবং জাপান আমদানিকৃত তেল এবং এলএনজির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।এদিকে, সোনার দাম সামান্য ০.১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩,৩৬৩ ডলার প্রতি আউন্সে। ডলারের দাম সামান্য বেড়েছে- ০.৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪৬.৪৮ ইয়েনে, ইউরোর দাম ০.৩ শতাংশ কমে ১.১৪৮১ ডলার। ডলার সূচক বেড়েছে ০.১৭ শতাংশ।
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা প্রভাব পড়েছে দেশের শেয়ার বাজারেরও।সপ্তাহের প্রথম দিনে সকাল থেকেই বাজারের সঙ্গী অস্থিরতা। সোমবার বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স প্রায় ১.০২ শতাংশ অথবা ৮৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৮১, ৫৬৪। এদিকে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফটি প্রায় ১ শতাংশ অথবা ২৫২ পয়েন্ট নিম্নগামী হয়ে ছিল ২৪,৮৫৯ -এর স্তরে।নিফটি মিডক্যাপ ১০০ এবং নিফটি স্মলক্যাপ ১০০ -এর সূচকও নিম্নগামী। ফলে মাথায় হাত পড়েছে বিনিয়োগকারীদের।এদিকে, ইজরায়েলের পক্ষ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে ঝাঁপাতেই হরমুজ প্রণালী বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে ইরান। সে দেশের সংসদ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার অনুমোদন দিয়েছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর উপর ছেড়ে দিয়েছে। তাতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ভারতের কপালেও। বিশ্বজুড়ে তেল সরবরাহের জন্য এই প্রণালী খুব গুরুত্বপূর্ণ। বহু দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে হরমুজ প্রণালীর উপর।
ভবিষ্যতের পূর্বাভাস যদিও আরও অস্থির। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান যদি সত্যিই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে, বা ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর সম্ভাবনা দেখা দেয়, তা হলে তেলের দাম ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। অতীতে এমন নজির রয়েছে বলেই সতর্ক করেছে জেপিমরগ্যান।