জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের একের পর একটা নৃশংস হত্যার খবর প্রকাশ্যে আসছে, আর তা শুনে শিউরে উঠছেন দেশবাসী। এবার পহেলগাঁওয়ের বৈসরণে হওয়া আরও এক নারকীয় হত্যাকাণ্ডের কথা সামনে এসেছে। স্ত্রী এবং তিন বছরের ছেলের সামনে মাথায় গুলি বেঙ্গালুরুর এক ইঞ্জিনিয়ারকে খুন করেছে জঙ্গিরা। (আরও পড়ুন: 'প্রয়োজনে আরও ১০টা যুদ্ধ করব কাশ্মীর নিয়ে', বক্তা হলেন পাক সেনা প্রধান)
জানা গেছে, পহেলগাঁওতে পর্যটকদের নাম-পরিচয় জানার পর গুলি চালানো হয়েছে অবাধে। বলা ভাল, বেছে বেছে টার্গেট করা হয়েছে 'হিন্দু পুরুষদের'। তেমনই বেঙ্গালুরুর ইঞ্জিনিয়ার ভারত ভূষণকে মারার আগে তাঁর পরিচয় জানতে চেয়েছিল জঙ্গিরা। তখন তিনি জোর কণ্ঠে বলেছিলেন, 'আমার নাম ভারত।' এরপরেই ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসবাদীরা ভারত ভূষণকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে। স্ত্রী-পুত্রের চোখের সামনে তাঁকে গুলিতে ঝাঁজরা করে দিয়ে যায় জঙ্গিরা।
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরে জঙ্গিদের গুলিতে শহিদ হলেন নদিয়ার ঝন্টু আলি শেখ
ভারতের স্ত্রী সুজাতা রামাইয়া হাসপাতালের চিকিৎসক।আদতে অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা ওই দম্পতি থাকতেন বেঙ্গালুরুতে। সঙ্গে তিন বছরের পুত্র। দিন কয়েক আগে জম্মু-কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভূস্বর্গ যে হত্যাপুরীতে পরিণত হবে কে তা জানত। এদিকে, ভারতের মৃত্যুর খবরে বেঙ্গালুরুতে বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর বাবা ৭৪ বছর বয়সি চেন্নাবীরপ্পা বুধবার সকালেই ছেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন।কান্না জড়ানো গলায় তিনি বলেন, 'আমি সকালের হাঁটার সময় একটি কন্নড় সংবাদপত্রে খবরটা দেখি। আমার পা কাঁপছিল। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। পরিবার এই খবর আমার এবং স্ত্রীর কাছে গোপন রেখেছিল।' চেন্নাবীরপ্পা আরও বলেন, 'মৃত্যুর ঘণ্টা আগেও ভারত কাশ্মীর থেকে তাঁকে ফোন করেছিল। সে আমাকে কাশ্মীরের সুন্দর দৃশ্য দেখিয়েছিল এবং বলেছিল যে তারা পহেলগাঁওতে যাচ্ছে। আমি তাঁকে সাবধানে থাকতে বলেছিলাম।' তিনি আরও বলেন, 'সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমার বড় ছেলে প্রীতম জানায় যে ভারত আহত হয়েছে এবং তাকে ফিরিয়ে আনতে সে কাশ্মীর যাচ্ছে। সুজাতার ভাইও গিয়েছিল।'
আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে অলআউট যুদ্ধ হলে পাক আর্মির কী হবে? CIA রিপোর্টে যা দাবি করা হয়েছিল
পরে প্রীতমকে ফোন করে বাবাকে জানান যে, 'ভারত তার ছেলেকে কোলে নিয়ে হাঁটছিল, আর স্ত্রী সুজাতা কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। সন্ত্রাসবাদীরা ভারতকে বলে ছেলেকে মায়ের কাছে হস্তান্তর করতে। তারপর তারা তার নাম জিজ্ঞাসা করে। যখন সে 'ভারত ভূষণ' বলে, তখন সন্ত্রাসবাদীরা জিজ্ঞাসা করে যে, সে হিন্দু না মুসলিম। যখন ভারত 'হিন্দু' বলে উত্তর দেয়, তখন তারা তাকে গুলি করে।' একই কথা বলেছেন ভারত ভূষণের শাশুড়ি মাও। তিনি জানান, বিকেলের পর মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। মেয়ের থেকেই তিনি জানতে পেরেছেন, পর্যটকদের জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল তাঁরা 'হিন্দু' কিনা। তারপরেই চালানো হচ্ছিল গুলি। আর ঠিক ততক্ষণ গুলি চালানো হচ্ছিল, যতক্ষণ না সামনের ব্যক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।মহিলা আরও জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে একজন ডাক্তার। ফলে বুঝতে পেরেছিলেন যে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। তারপরই প্রাণ বাঁচাতে মোবাইল আর পার্স নিয়ে পালিয়েছিলেন। সুজাতাদেবী জানিয়েছেন, তাঁর মেয়েকে = নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে সেনাবাহিনী।