বুধবার নিজের বাসভবনে আক্রান্ত হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা। আর এই হামলার পর থেকেই দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধী শিবির। এই আবহে তড়িঘড়ি মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে সরানো হল দিল্লি পুলিশকে। 'জেড' ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর হাতে।
সূত্রের খবর, প্রতি সপ্তাহের মতো বুধবার সকালেও জনশুনানি চলছিল মুখ্যমন্ত্রীর সিভিল লাইনস ক্যাম্প অফিসে। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা দিল্লির নাগরিকদের অভিযোগ শুনছিলেন। ঠিক সেই সময় গুজরাটের বাসিন্দা রাজেশ কিমজি সাকারিয়া নামের এক ব্যক্তি অভিযোগকারী সেজে সামনে আসেন। প্রথমে তিনি সাধারণ নাগরিকের মতো কথা বললেও হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রীর দিকে ধেয়ে যান এবং তাঁকে আক্রমণের চেষ্টা করেন। উপস্থিত নিরাপত্তা কর্মীরা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেন এবং অভিযুক্তকে আটক করা হয়।হামলার পর প্রথমে খবর আসে মুখ্যমন্ত্রীর চুল টানা হয়েছে, চড় মারার পর পাথর ছোড়া হয়েছে। পরবর্তীতে বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এমন কিছুই হয়নি। শুনানি চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি কাগজ নিয়ে হাজির হন ওই ব্যাক্তি। সেই সময়েই মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে টানা হয়। তারপরেই ওই ব্যাক্তিকে পাকড়াও করে নিরাপত্তারক্ষীরা।
পরে জানা যায়, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গুজরাটে একাধিক অপরাধমূলক মামলা রয়েছে। যদিও বেশ কয়েকটি মামলায় সে খালাস পেয়েছে, তবে পুলিশ তাকে 'সিরিয়াল অপরাধী' বলে উল্লেখ করেছে। এবার দিল্লি পুলিশ তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির নতুন সংহিতা ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৯(১) ধারা অনুযায়ী খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করেছে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বৃদ্ধি
ভারতে ভিআইপি নিরাপত্তার বিভিন্ন স্তর রয়েছে-এক্স, ওয়াই, ওয়াই-প্লাস, জেড এবং জেড-প্লাস। এরমধ্যে ‘জেড’ ক্যাটেগরি অন্যতম উচ্চস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘ইয়েলো বুক’ অনুযায়ী, এই ক্যাটেগরির সুরক্ষায় প্রায় ২২ থেকে ২৫ জন বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা কর্মী থাকেন।এই দলে থাকেন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার, সশস্ত্র কমান্ডো, এসকর্ট টিম, ওয়াচার এবং স্থায়ী প্রহরী। নিরাপত্তার ব্যবস্থা কেবল বাসভবন বা অফিসের বাইরে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং ২৪ ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রীর চলাফেরা ও জনসভার প্রতিটি জায়গায় কড়া নজরদারি চালানো হয়। সিআরপিএফ-এর কমান্ডোরা এই দায়িত্ব সামলান। তাঁরা অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত এবং একাধিক স্তরে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেন, নিকটতম বডিগার্ড থেকে শুরু করে বাইরের আর্মড রেসপন্স টিম পর্যন্ত। ফলে হুমকি এড়ানো এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব হয়।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ইতিমধ্যেই সিআরপিএফ মোতায়েন হয়েছে। জনশুনানি বা অন্যান্য গণ-অনুষ্ঠানে নতুন নিরাপত্তা প্রোটোকল চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে প্রবেশকারী প্রতিটি গাড়ি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে।আক্রমণের ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তাকে ‘জেড’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা প্রদান নিঃসন্দেহে এক বড় সিদ্ধান্ত। এতে একদিকে যেমন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে যে কোনও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র প্রতিরোধেও এটি কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে। পুলিশ সূত্রে খবর, এবার থেকে জনশুনানি চলাকালীন অভিযোগকারীদের সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। প্রথমে প্রতিটি অভিযোগ যাচাই করা হবে এবং তারপর মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার কাছে উপস্থাপন করা হবে। অভিযোগকারীরা যাতে তাঁর কাছাকাছি আসতে না পারে সেজন্য একটি নির্দিষ্ট পরিধিও তৈরি করা হবে।