জলের সমস্যা দূরের বদলে হিতে-বিপরীত হতে পারে। ধ্বংস হতে পারে সুবিশাল অরণ্য। লুপ্ত হতে পারে বন্যপ্রাণ। আর সেই আশঙ্কায় কেন-বেতয়া লিঙ্ক প্রকল্প স্থগিত রাখার আর্জি জানালেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। সূত্রের খবর, বিষয়ে গত ২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে চিঠিতে জানিয়েছেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশের ক্ষরাপ্রবণ বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলে রুগ্ন প্রায় বেতোয়া নদী। জলের অভাব। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল, এই অঞ্চলের জলের সরবরাহ বৃদ্ধি। সেই উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রদেশের কেন নদীর অতিরিক্ত জল সরবরাহ করার পরিকল্পনা করা হয়। কেন ও বেতোয়া নদী সংযুক্ত করার মাধ্যমে জল সংকট করার পরিকল্পনা।
১৯৮০ সাল থেকেই এই প্রকল্পের ভাবনা। কিন্তু দুই রাজ্যের মধ্যে ক্রমাগত এই নিয়ে বিরোধ হয়। বিভিন্ন কারণে বারবার পিছিয়ে যায় চুক্তি ও রূপায়ন। গত ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে কেন-বেতোয়া লিঙ্ক প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় জলশক্তিমন্ত্রী এবং উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তবে প্রকল্পের পরিকল্পনার সূচনা থেকেই এর বিভিন্ন খারাপ দিক নিয়ে সরব হয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা। এর মূল কারণ মধ্যপ্রদেশের কেন নদী সংলগ্ন পান্না ব্যাঘ্র প্রকল্প। এই প্রকল্প ফলে বিনষ্ট হবে সুবিশাল অরণ্যের বেশ খানিকটা অংশ। এমনটাই বলছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। সেই একই দাবি করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তাঁর কথায়, 'এই প্রকল্পে পান্না টাইগার রিজার্ভের প্রায় ৪০% বিনষ্ট হবে। রাজ্য সরকারের অনুমানেই একথা স্পষ্ট বলা হয়েছে।' শুধু তাই নয়, বাঁধ তৈরির ফলে ডুবে যাবে বিস্তীর্ণ এলাকা। এর ফলে কাটা পড়বে প্রায় ১৮ লাখ গাছ, এমনটাই বলেন সোনিয়া। এক স্থানের জলের সমস্যা দূর করতে গিয়ে উলটে অপর এক জায়গায় সমস্যা ডেকে আনা হবে না তো? প্রশ্ন তাঁর। এই ইস্যুতে যে ন্যাশানাল গ্রিন ট্রাইবুনাল ও সুপ্রিম কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা চলছে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন সোনিয়া।
এই প্রকল্পে কেন নদীর উপর একটি ৭৩.৮ মিটার উঁচু বাঁধ তৈরিকরার কথা। কেন ও বেতোয়া দুটি নদীই বৃষ্টির জলে পুষ্ট। দুটিই যমুনা নদীর উপনদী। প্রকল্প রূপায়নে ৮ বছর লাগার কথা। আনুমানিক খরচ প্রায় ৩৫,১১১ কোটি টাকা।