প্রায় দেড় দশক পর 'নতুন সখা' পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক তো হল। কিন্তু, তাতে কাজের কাজ কিছু হল কি? এই প্রশ্ন উঠছেই।
কারণ, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মহম্মদ ইউনুসের কেয়ার টেকার সরকার পুরোনো শত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে কোলাকুলি শুরু করলেও সদ্য হওয়া দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের মূল দাবিগুলিকে কার্যত পাত্তাই দিল না ইসলামাবাদ! বদলে টেনে আনল ভারতের প্রসঙ্গ! যার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও সম্পর্ক নেই! গুরুগম্ভীর আলোচনা হল গাজা নিয়েও। কিন্তু, ব্রাত্যই থেকে গেল মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নারকীয় হত্য়ালীলা প্রসঙ্গ।
ঘোষণা অনুসারেই বাংলাদেশ সফরে এসে সেদেশের বিদেশ সচিব মহম্মদ জসিমউদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের বিদেশ সচিব আমনা বালোচ। সেই বৈঠক হয় গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল, ২০২৫)। বৈঠকের পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়, তাতে স্পষ্ট জানানো হয় - একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছিল, তার জন্য আজকের পাকিস্তানকে বর্তমান বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের তরফে আরও জানানো হয় যে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠিত হওয়ার আগে পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের যে অভিন্ন সম্পদ ছিল, সেই বাবদ এবং মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসাবে আজকের বাংলাদেশের পাকিস্তানের কাছে বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪৩২ কোটি মার্কিন ডলার। পাকিস্তানকে সেই বকেয়া অর্থ বাংলাদেশকে মিটিয়ে দিতে হবে।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের একদিন পর - গতকাল (শুক্রবার - ১৮ এপ্রিল, ২০২৫) পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে মুক্তিযুদ্ধের উচ্চবাচ্য নেই! বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমেও তা উল্লেখ করা হয়েছে। বদলে জম্মু-কাশ্মীরে 'ভারতের অবৈধ দখল' সম্পর্কে বাংলাদেশকে অবগত করেছে পাকিস্তান!
আসলে পাকিস্তানের তরফে প্রকাশ করা বিবৃতিতে অতীত নিয়ে তেমন কোনও উল্লেখই নেই। বদলে তারা কথা বলেছে ভবিষ্যৎ নিয়ে। পাকিস্তানের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বাংলাদেশিদের পঠনপাঠনের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরুর বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং আকাশপথে ফের বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্য়ে সরাসরি বিমান চালানোর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, গাজায় ইজরায়েলি হামলার নিন্দা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে, জানানো হয়েছে - আগামী বছর ফের বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে। সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ইসলামাবাদে।