ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ অষ্টম দিনে পদার্পন করল।আর এই সংঘাতের জেরে ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার বদলে উত্তেজনা বেড়েছে কয়েকগুণ। এরমধ্যে ইজরায়েলের সামরিক গবেষণার কেন্দ্র ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান।আর এটিকে ইরানের 'নৈতিক জয়' হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। (আরও পড়ুন: আয়াতোল্লাহ খামেনির এত ক্ষমতা এল কীভাবে? রইল ইরানের সর্বোচ্চ নেতার শাসনকালের কিছু তথ্য)
আরও পড়ুন: মিলাইলের কাছে ফেল আয়রন ডোম! ইরান-ইজরায়েলের মধ্যে কে কোন ক্ষেত্রে এগিয়ে?
মধ্য ইজরায়েলের রেহোভোটে অবস্থিত গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স জানিয়েছে, ইরানের সাম্প্রতিক হামলায় তাদের বেশ কয়েকটি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জীববিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান সহ নানা বিষয়ে গবেষণার জন্য বিশ্বখ্যাত এই কেন্দ্র। হামলার পর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে ইজরায়েল।রবিবার ইরানের হামলায় প্রতিষ্ঠানটির একাধিক ভবনে সরাসরি আঘাত লাগে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কমপ্লেক্স সম্পূর্ণভাবে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।এই গবেষণাগারগুলোতে জীবনবিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং অণুজীববিজ্ঞানের ওপর অত্যাধুনিক গবেষণা চলত। যেগুলোর ফলাফল ইজরায়েলের নজরদারি প্রযুক্তি, টার্গেটিং সিস্টেম এবং অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় সরাসরি প্রয়োগ হয়েছে। এসব প্রযুক্তি গাজা, লেবানন, ইয়েমেন ও সম্প্রতি ইরানের ভূখণ্ডে পরিচালিত হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে। (আরও পড়ুন: ইরানে পালাবদল নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করেন মুনির? বড় দাবি রিপোর্টে)
আরও পড়ুন: ওয়াশিংটনে অবতরণ বোয়িং ই-৪বি নাইটওয়াচের, এই 'ডুমসডে প্লেন' কী?
ধ্বংসপ্রাপ্ত গবেষণাগারগুলোর মধ্যে একটি পরিচালনা করতেন অধ্যাপক এলদাদ জাহোর। তিনি আণবিক কোষ জীববিদ্যার একজন প্রবীণ গবেষক। অপরদিকে অধ্যাপক এরান সেগালের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগারেও সরাসরি আঘাত লেগেছে। তিনি জানান, মিলিয়ন ডলারের যন্ত্র জল ও কাঠামোগত ক্ষতিতে একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। তার গবেষণাগার মূলত যুদ্ধক্ষেত্রের রিয়েল-টাইম সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নজরদারি অ্যালগরিদম উন্নয়নে কাজ করত।অন্যদিকে নিউরো সায়েন্স ও কোষবিজ্ঞানী ওরেন শুলডিনার বলেছেন, ‘এই গবেষণাকেন্দ্রে হামলা চালানো ইরানের নৈতিক জয়। আমাদের সমস্ত গবেষণা থমকে গিয়েছে। আবার নতুন করে সবটা শুরু করতে হবে।’ ইরান বিশেষজ্ঞ এবং তেল আভিভের ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র গবেষক ইয়োয়েল গুজানস্কি বলেন, 'ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট দীর্ঘদিন ধরে ইরানের নজরে রয়েছে।' (আরও পড়ুন: ভারত সীমান্ত নিয়ে বড় বার্তা বাংলাদেশ সেনার,শোনা গিয়েছিল সংঘাতের ষড়যন্ত্রের কথা)
আরও পড়ুন: ইউনুস জমানায় সুইস ব্যাঙ্কে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩৩ গুণ!
আরও পড়ুন: ইউনুস প্রশাসনে ভরসা নেই? বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর বড় বয়ানে উঠল প্রশ্ন
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য গত কয়েক বছর ধরে নানা চেষ্টা চালাচ্ছে ইজরায়েল। সম্প্রতি ইরানের ন’জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন ইজরায়েলি হামলায়। গত বছর ইজরায়েল দাবি করেছিল, ওয়েজম্যান ইনস্টিটিউটের এক পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করতে চেয়েছিল ইরানি গুপ্তচরচক্র। যদিও সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। এবার সংঘর্ষে জড়াতেই সেই প্রতিষ্ঠানেই সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ইরান। অনেকেই মনে করছেন, ইরান ইচ্ছাকৃতভাবেই এই গবেষণাকেন্দ্রকে নিশানা করেছে। কারণ এটি কেবল গবেষণা কেন্দ্রই নয়, ইজরায়েলের সামরিক ব্যবস্থার সঙ্গেও যুক্ত। এই হামলা বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট মূলত চিকিৎসাবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করে থাকে। এখানকার গবেষক আদা ইয়োনাথ ২০০৯ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটি ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা সংস্থা এলবিট সিস্টেমস-এর সঙ্গে যৌথ গবেষণায়ও যুক্ত ছিল।ইরানের হামলার পর ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, 'ইরান ধ্বংস ও অরাজকতা ছড়াতে চায়। কিন্তু আমরা জীবন, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের মূল্যবোধকে অটুট রাখব এবং শান্তির জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাব।'