শিশির গুপ্তচিন থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের মোকাবিলায় 'নিউ নর্মাল' মেনে নিতে তৈরি। কিন্তু কোনওভাবেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেই 'নয়া সাধারণ' মানতে নারাজ ভারত। আর তাই গত ৬ জুনের বৈঠকে সেনা সরানোর যে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চিন, তা পূরণের অপেক্ষায় রয়েছে নয়াদিল্লি।নরেন্দ্র মোদী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট - প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের খাতিরে আগের অবস্থানে ফিরে যাক চিন। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) কত সময় নেয়, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্বাভাবিকত্ব ফিরিয়ে আনার আর কোনও কম চেষ্টাকে বিশ্বসাঘাতকতা হিসেবেই বিবেচিত করা হবে।আপাতত চিনের বাহিনী সরে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক এবং সামরিক পর্যায়ের আলোচনার সিদ্ধান্তের বাস্তব রূপায়ণের পর কোনও ইতিবাচক বিবৃতির পথে হাঁটবে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তা সত্ত্বেও ওয়েস্টার্ন সেক্টরে ১,৫৫৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সামান্য হলেও উত্তেজনা কমেছে। লাদাখ সেক্টরের যে চারটি জায়গায় সংঘাতে অবতীর্ণ হয়েছিল দু'দেশের সেনা, তার মধ্যে দুটি পয়েন্টে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়ার খবর মিলেছে। এক উচ্চপদস্থ ভারতীয় আধিকারিক বলেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি পরিবর্তনশীলই থাকছে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে পিপলস লিবারেশন আর্মিকে। যারা বিভিন্ন চুক্তি এবং দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন পদক্ষেপ লঙ্ঘন করে গত মাসে একতরফা সীমান্ত পরিস্থিতির পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিল।’সেই পরিস্থিতিতে অবশ্য সামরিক প্রস্তুতিতে খামতি রাখছে না কোনও দেশই। সীমান্তে বাড়তি সতর্ক থাকার পাশাপাশি সদ্য নির্মিত দারবুক-সিয়ক দৌলত বেগ ওল্ডি সড়কের সঙ্গে ভারতের টহলদারি পোস্টগুলি জুড়ে দেওয়ার কাজ চালাচ্ছেন সেনার ইঞ্জিনিয়াররা, যাতে চিনের একতরফা কোনও পদক্ষেপের যোগ্য জবাব দিতে ভারতীয় সেনার ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়।পাশাপাশি গত মাসে আকসাই চিনে সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল মোতায়েন করেছিল পিএলএ। পালটা হিসেবে ৩,৪৮৮ কিলোমিটার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দূরপাল্লার অস্ত্র তৈরি রেখেছে ভারত। চিনের দিকে কড়া নজর রাখার পাশাপাশি পাকিস্তান অধিকৃত গিলগিট-বালটিস্তানে ইমরান খান প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেও দৃষ্টি রয়েছে সেনার।তবে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা কার্যত নেই। চিনেরও তেমন উদ্দেশ্য নেই বলে ধারণা ওয়াকিবহল মহলের। তবে পশ্চিমী দেশের বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, লাল পতাকা উড়লে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন বন্ধু দেশগুলির থেকে সাহায্য নেবে ভারত। আপাতত সীমান্তে পর্যাপ্ত সেনা মোতায়েন করে যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করার নীতি নিয়েছে ভারত। চিনের যে কোনও আগ্রাসী পদক্ষেপের জন্য ভারতের তিন বাহিনীই প্রস্তুত রয়েছে। জলের তলায় টহলদারি চালাচ্ছে সাবমেরিনও।যদিও ভারতের জাতীয় সুরক্ষার নীতি-নির্ধারকদের বিশ্বাস, চিনা সেনার প্রধান শি জিনপিং এবং ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কম্যান্ডার ঝাও জঙ্গকিউয়ের মাথায় সুবুদ্ধির উদয় হবে।