সামান্য হলেও জার্মানিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ ডেল্টার মোকাবিলা করতে টিকাদান কর্মসূচির গতি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।টানা প্রায় দুই মাস ধরে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ লাগাতার কমে চলার পর জার্মানিতে সংক্রমণের হার আবার সামান্য হলেও বেড়েছে৷ সেইসঙ্গে আক্রান্তদের মধ্যে ডেল্টা প্রজাতির অনুপাতও বাড়ছে৷ কমপক্ষে ৫৯ শতাংশ করোনা রোগী এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রবার্ট কখ ইনস্টিটিইট৷ প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণের গড় সাপ্তাহিক হার আপাতত ৫.১৷ একদিনে সেই হার ০.২ শতাংশ বেড়েছে৷ এমন পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ পুরোপুরি প্রত্যাহার করার ডাক সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছেন জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান৷ তাঁর মতে, করোনা টিকা কর্মসূচির গতির উপরে সেই পদক্ষেপ নির্ভর করবে৷ তবে আগামী আগস্ট মাসে টিকার দুটি ডোজ পাওয়া মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট হবে না বলে তিনি মনে করেন৷ ৬০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে টিকাপ্রাপ্তদের অনুপাত শীঘ্রই প্রায় ৯০ শতাংশ ছুঁলেও যথেষ্ট সংখ্যক কমবয়সিদের টিকার আওতায় আনতে তিনি জোরালো প্রচার অভিযানের ঘোষণা করেন৷ এই বয়সের কমপক্ষে ৮৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দিলে তবেই কার্যকরভাবে ডেল্টা প্রজাতির মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ৷ সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মধ্যে বিধিনিয়ম আরও শিথিল করা যাবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্পান৷এর আগে জার্মান বিদেশমন্ত্রী হাইকো মাস ও অন্যান্য কিছু মহল থেকে আগস্ট মাসেই করোনা সংক্রান্ত বিধিনিয়ম প্রত্যাহারের জন্য চাপ আসছিল৷ মাস বলেছিলেন, সকল মানুষ টিকা নেওয়ার সুযোগ পেলেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্পান অবশ্য মনে করিয়ে দেন, যে টিকাদানের বর্তমান গতির পরিপ্রেক্ষিতে আগস্ট মাসের মধ্যেই সব মানুষ টিকার দুটি ডোজ পাবেন না৷জার্মানিতে প্রায় ৫৭ শতাংশ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ ও প্রায় ৪০ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ পেলেও বর্তমানে টিকাদান কর্মসূচির গতি অনেকটা কমে গিয়েছে৷ ফলে আরও বেশি মানুষের কাছে টিকা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ভিন্ন উপায় নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে৷ শুধু ভ্যাকসিনেশন সেন্টার, ডাক্তারের চেম্বার ও অফিসের ডাক্তারদের কাছে টিকা সীমাবদ্ধ না রেখে সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ডাক বাড়ছে৷ বিশেষ করে যে সব মানুষ নানা কারণে এখনও টিকা নেওয়ার বিষয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছেন, তাঁদের আস্থা অর্জন করা প্রয়োজন বলে মনে করছে নানা মহাল৷ এমনকি প্রণোদনার মাধ্যমে বিষয়টিকে আকর্ষণীয় করে তোলার পরামর্শ শোনা যাচ্ছে৷ জার্মানির অনেক শহর ও জেলা কর্তৃপক্ষ ঘনবসতিপূর্ণ ও সামাজিকভাবে অবহেলিত এলাকায় মোবাইল ভ্যাকসিনেশন টিম পাঠিয়ে আরও বেশি মানুষকে টিকা দেবার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ডেল্টার থাবা ও টিকাদান কর্মসূচির ধীর গতির প্রেক্ষিতে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্বের মতো সহজ অথচ কার্যকর পদক্ষেপ আরও কিছুকাল চালিয়ে যাবার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷ অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ তুলে ধরে একজন বিশেষজ্ঞ মনে করিয়ে দিয়েছেন যে বিমানের পাইলট ও কর্মীদের একজন মাস্ক না পরে শপিং মলে প্রবেশ করায় অনেক মানুষ কীভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন৷