২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে জনসংখ্যা কমল চিনের। এই আবহে বিগত ৬ দশকে এই প্রথমবার জনসংখ্যা সঙ্কুচিত হল বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে। এই পরিস্থিতিতে চিনে ডেমোগ্রাফিক সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। চিনে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ক্রমেই কমছে। এদিকে রেকর্ড পতন হয়েছে জন্মের হারেও। এর প্রভাব সরাসরি চিনের অর্থনীতির ওপর পড়তে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২২ সালে চিনা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। গত চার দশকে যা সবথেরে খারাপ। অবশ্য এই পরিসংখ্যানের নেপথ্যে জনসংখ্যার চেয়ে কোভিডের ভূমিকা বেশি। কিন্তু চিনের জন্ম হার এবং কর্মক্ষম নাগরিকের সংখ্যার গ্রাফ যদি নিম্নমুখী থাকে, তবে অদূর ভবিষ্যতে এটাই হয়ে উঠবে অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ। (আরও পড়ুন: চিনা বাধার একবছর পর হাফিজ সইদের শ্যালককে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী তকমা UNSC-র)
সরকারি হিসেব বলছে, ২০২২ সালের শেষে চিনের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১,৪১,১৭,৫০,০০০। বেজিংয়ের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো মঙ্গলবার জানিয়েছে, আগের বছরের শেষের তুলনায় এই সংখ্যাটা সাড়ে আট লাখ কমেছে। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে চিনে জন্ম নিয়েছে ৯৫.৬ লাখ শিশু। এদিকে গতবছর চিনে মৃত নাগরিকের সংখ্যা ছিল ১.০৪ কোটি। এর আগে ১৯৬০ সালে চিনে শেষবারের মতো জনসংখ্যা কমেছিল। সেবার চিন সম্মুখীন হয়েছিল আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ দুর্ভিক্ষের। মাও সে তুঙের ভুল নীতির কারণেই সেই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বলে দাবি করা হয়।
চিনের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিই এই বিপুল জনসংখ্যা। সস্তায় প্রচুর কর্মীর চাহিদা মেটাতে চিনে হাজির হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উৎপাদনকারী সংস্থা। কিন্তু কঠোর জন্মনিয়ন্ত্রণ আইনের প্রভাবে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই চিনে জন্মহার আগের মতো বেশি ছিল না। এই আবহে হঠাৎ জনসংখ্যা অনেক হ্রাস পেলে তার প্রভাব পড়তে পারে অর্থনীতিতে। জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঠেকাতে ১৯৭৯ সালে এক সন্তান নীতি চালু করেছিল চিন। গত ২০১৬ সালে দুই সন্তানের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে গতবছর চিনের পলিটব্যুরোতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরও কিছুটা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানানো হয়, এবার থেকে তিন সন্তানের জন্ম দেওয়ার অনুমতি পাবেন চিনা দম্পতিরা।
এদিকে গতবছর ডাও জোনস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দাবি করেছিল, ২০২৫ সালের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে নেবে চিন। রিপোর্টে দাবি করা হয়, যেসব প্রোভিন্সে জন্মের হার কম, সেসব স্থানে আগে এই বিধিনিষেধ তোলা হবে। পরে ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো বিধিনিষেধ শিথিল করে দেওয়া হবে। বর্তমানে কর্মক্ষম জনতার সংখ্যা গত দশকগুলির তুলনায় অনেকটাই কমে গিয়েছে। আর ৬৫-র ওপরের বয়সিদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপর থেকে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গিয়েছে।
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক