ভিলেজ পুলিশ বা সিভিক ভলেন্টিয়ারদের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ শোনা যায়। এই পদে নিয়োগ নিয়েও স্বজনপোষণের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এবার সেই ভিলেজ পুলিশকেই বড় দায়িত্ব দিল তৃণমূল কংগ্রেস। জলপাইগুড়িতে শাসক দলের এক সিদ্ধান্ত ঘিরে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিতর্ক। জেলায় দলীয় সংগঠনের শীর্ষ পদে এবার জায়গা দেওয়া হয়েছে ময়নাগুড়ি থানায় কর্মরত এক ভিলেজ পুলিশকে। ওই ভিলেজ পুলিশের নাম রামমোহন রায়। ওই ব্যক্তি এতদিন পুলিশের হয়ে কাজ করলেও, এবার তাঁর কাঁধেই তুলে দেওয়া হল তৃণমূল কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা যুব সভাপতির দায়িত্ব। তাই ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে জেলার রাজনীতিতে।
আরও পড়ুন: নকল মোহর বিক্রির কারবারের দখল নিয়ে তৃণমূলের ২ গোষ্ঠীর সংঘর্ষ, লাভপুরে নিহত ২
ভবিষ্যতের ভোট পেতে তৃণমূলের এই পদক্ষেপ কৌশলী বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। রামমোহনের বয়স কম, সংরক্ষিত আসনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন, আর তাঁর থানার অভিজ্ঞতা রাজনীতিতে কাজে লাগতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। রামমোহন নিজেও জানিয়েছেন, তিনি আর পুলিশের চাকরিতে নেই। তিনি জানান, ভিলেজ পুলিশ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এখন দল তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সামলাতে চান। তিনি আরও জানান, বিধানসভা ভোট আসছে তাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামা দরকার। তবে এসব ব্যাখাতেও বিরোধীদের ক্ষোভ মিটছে না। বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার এক নেতার অভিযোগ, ওই ব্যক্তির থানায় ছিল প্রভাব। সাধারণ ভিলেজ পুলিশের যা ভূমিকা, তা ছাড়িয়ে অনেক বড় জায়গায় কাজ করতেন উনি। এমনকী তাঁর জন্য থানার ভিতরে আলাদা ঘরও ছিল। কাদের আশীর্বাদে এটা সম্ভব হয়েছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না বলে জানান ওই বিজেপি নেতা।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যে পদে বেতন খুবই সীমিত, সেই পদে থেকে কেউ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সামাজিক কাজে নামেন কীভাবে? তাঁর দাবি, রামমোহনের এই উন্নতির পেছনে আসল খেলা কী, তা সবাই বোঝে। এটা সাধারণ চাকরি না, এটা ছিল রাজনৈতিক পাইপলাইন। তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য অন্য সুর শোনা গিয়েছে। জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ জানান, রামমোহন ছাত্র রাজনীতি থেকেই দলে যুক্ত ছিলেন। বয়সে তরুণ, কর্মক্ষম এবং নেতিবাচক কোনও অভিযোগও নেই। জেলার কিছু আসন তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত।সেই প্রেক্ষিতেও তাঁকে এই জায়গায় আনা হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে জানান, দল করার জন্য তাঁকে পুলিশের ছাড়তে হয়েছে। এখন রাজনীতির দায়িত্ব নিচ্ছেন। এতে অন্যায় কিছু নেই, বরং তরুণ নেতৃত্বে দল আরও শক্তিশালী হবে।
তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, এই নিয়োগ শুধুই কৌশলগত নয়, বরং এতে তৃণমূল বার্তা দিতে চাইছে দল যাঁদের প্রয়োজন বলে মনে করে, তাঁদের যেকোনও স্তর থেকে তুলে আনতে পিছপা হবে না।যদিও এই যুক্তিতে বিরোধীরা খুশি নয়। তাঁদের দাবি, এটা আবারও প্রমাণ করে, রাজ্যের প্রশাসনিক স্তরেও রাজনৈতিক প্রভাব কতটা গভীরভাবে ছড়িয়ে আছে।