মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশের হাতাহাতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল উপত্যকা।সোমবার সকালে জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের শহিদ সমাধিস্থলের কাছে দেখা দিল বিশৃঙ্খলা। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং তার সমর্থকরা শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন। সেই সময় পুলিশ সকলকে থামানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ।
এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও শেয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ লিখেছেন, 'শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি আমি। কিন্তু আমি আরও কঠোর ধাতুতে গড়া। আমাকে থামানো যাবে না। আমি বেআইনি বা অবৈধ কিছুই করছিলাম না। আসলে, এই 'আইনের রক্ষকদের' ব্যাখ্যা করা উচিত যে তাঁরা কোন আইনের অধীনে আমাদের ফাতিহা পড়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছিলেন?' ১৯৩১ সালের ১৩ জুলাই মহারাজা হরি সিং ডোগরার বাহিনীর হাতে নিহত হন কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ওমর আবদুল্লাহ গিয়েছিলেন স্মৃতিসৌধে।কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী এবং শীর্ষস্থানীয় নেতাদের শহিদদের সমাধিস্থল বা 'মাজার-ই-শুহাদা' পরিদর্শন করতে বাধা দেয় বলে পুলিশ, এমনটাই অভিযোগ। সেখানে পৌঁছতে গিয়ে পাঁচিল টপকে যেতে দেখা যায় ওমরকে। একটি ভিডিয়োয় সেই দৃশ্য উঠে আসে। অপর ভিডিয়ো খোদ ওমর পোস্ট করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁকে বাধা দিতে যায়।
আরও পড়ুন-'বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার!' প্রধানমন্ত্রীর আপত্তিকর ব্যঙ্গচিত্র, SC-তে বিপাকে কার্টুনিস্ট
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'গতকাল আমাদের এখানে ফাতিহা পাঠ করতে দেওয়া হয়নি। লোকজনকে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল। গেট খোলার পরে আমি কন্ট্রোল রুমে জানাই যে আমি এখানে আসতে চাই। তখন আমার গেটের সামনে একটি বাঙ্কার রেখে দেওয়া হয়। গভীর রাত পর্যন্ত এটি সরানো হয়নি। আজ আমি তাদের কিছু বলিনি। তাদের না জানিয়েই আমি গাড়িতে উঠে পড়ি এবং এভাবে চলে আসি।' তাঁর আরও সংযোজন, 'ওদের নির্লজ্জতা দেখুন। আজও ওরা আমাদের থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। আমরা নওহাটা চকে গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলাম। ওরা আমাদের সামনে একটি বাঙ্কার রেখে আমাদের মারধর করার চেষ্টা করেছিলেন। এই পোশাক পরা পুলিশ সদস্যরা মাঝে মাঝে আইন ভুলে যান। আমি ওদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, আজ কোন আইনের অধীনে ওরা আমাদের থামানোর চেষ্টা করেছিলেন? নিষেধাজ্ঞাগুলি গতকালের জন্য ছিল। ওরা বলেন যে এটি একটি স্বাধীন দেশ, কিন্তু কখনও কখনও মনে করেন আমরা ওদের দাস। আমরা কারও দাস নই। আমরা যদি দাস হই, তবে আমরা জনগণের দাস।'
আরও পড়ুন-'বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার!' প্রধানমন্ত্রীর আপত্তিকর ব্যঙ্গচিত্র, SC-তে বিপাকে কার্টুনিস্ট
ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা উপত্যকার নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে বলেন, 'ওরা আমাদের থামানোর চেষ্টা করেছিলেন, আমাদের পতাকা ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এসে ফাতিহা পাঠ করেছি।' এর আগে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের প্রশাসন শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং শহিদদের সমাধিস্থলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।এর নিন্দা জানিয়ে ওমর আবদুল্লাহ রবিবার সকালে পোস্ট করেছিলেন, '১৩ জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ড আমাদের জালিয়ানওয়ালাবাগ। যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেই করেছিলেন। কাশ্মীর ব্রিটিশ আধিপত্যের অধীনে শাসিত হচ্ছিল। কতই না দুঃখের বিষয় যে, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সকল রূপে লড়াই করা প্রকৃত বীরদের আজ কেবল মুসলিম হওয়ার কারণে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আজ আমাদের তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে। আমরা তাঁদের আত্মত্যাগ ভুলব না।' পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি এবং জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজাদ লোন-সহ অন্যান্য কাশ্মীর নেতারাও তাদের আটকের নিন্দা জানিয়ে পোস্ট করেছেন।