মানুষ চলে যায়। কিন্তু থেকে যায় তাঁর কীর্তি, ব্যবহার এবং সম্পর্ক। যা স্মৃতিতে শোকের অনুভূতি দেয় আবার রেখে যাওয়া পথ নীতি–আদর্শে পরিণত হয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণে এমন উদাহরণই রয়ে গেল। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্ণর। মুম্বইয়ে কর্মরত থাকাকালীন মাসে একবার অথবা দু’বার একটা বইয়ের স্টলে যেতেন। কথা বলতেন দোকানির সঙ্গে। মৃদুভাষী মনমোহনকে তখন থেকে চিনতেন বই দোকানের কর্মী টি জগনাথ। আজ তাঁর মনে পড়ছে বইপ্রেমী মনমোহন সিংকে যখন শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর।
এই ঘটনা শুনে আবেগতারিত হয়ে পড়েছেন ওই বই দোকানের কর্মী টি জগনাথ। তাঁর স্মৃতিচারণে উঠে এল নানা কথা। সালটা ছিল ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্ণর মতো পদে থেকে ফোর্ট এলাকার ওই বইয়ের দোকানে আসতেন মনমোহন সিং। মৃদুস্বরে কথা বলতেন। নতুন কি বই এসেছে? জানতে চাইতেন। কত দাম? জানার সঙ্গে সঙ্গে দোকানিকেও জিজ্ঞাসা করতেন, আপনি কেমন আছেন? এই সামান্য কথাতেই যেন সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। ওই দোকানি টি জগনাথ বলেন, ‘উনি ব্যান্ড গালা স্যুট অথবা কুর্তা পাজামা পরে আসতেন। মধ্যাহ্নভোজের সময় বেশিরভাগ আসতেন তিনি। আর মৃদুস্বরে কথা বলতেন।’
আরও পড়ুন: বিধাননগর পুরনিগমের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিখোঁজ, ১৪ দিনেও খুঁজে পেল না পুলিশ
ওই ব্যবহারই তাঁর পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় এই বইয়ের দোকানে। আজ পঞ্চভূতে বিলিন হয়ে গেলেন তিনি। ৯২ বছর বয়সে ভারত হারাল তাঁর কৃতী সন্তানকে। রেখে যাওয়া স্মৃতি ঘেঁটে এখন সেসব কথাই মনে করছেন দেশবাসী। আর দোকানি টি জগনাথ স্মৃতি রোমন্থন করে বলছেন, ‘আমি এই দোকানে ম্যানেজমেন্ট এবং সাহিত্যের বইয়ের দায়িত্বে ছিলাম। আর তিনি এখানে এসে ম্যানেজমেন্ট, অর্থনীতির বই খুঁজতেন। সেই সূত্রেই আলাপ হয়। দোকানের বাকি সহকর্মীরা দেখতে পেলে বলতেন, ওই দেখ ভাল ব্যবহারের মানুষটি আসছেন। অনেক সময় আমি সেলফ থেকে বই খুঁজে দিতাম তাঁকে। আমাকে উনি নামে চিনতেন।’
এরপর কেটে গিয়েছে কত সময়। দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন হয়েছিলেন ড. মনমোহন সিং তখন টিভিতে তা দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল এই দোকানির। কারণ এত বড় মানুষটি তাঁর দোকানে আসতেন। তাই টি জগনাথের বক্তব্য, ‘এই দোকানের মালিক টিএন শানবাগ তাঁকে বই তুলে দিতে সাহায্য করতেন। একটা সময় এমন হয়ে গিয়েছিল যে, তাঁর জন্য বিকেলে রীতিমতো অপেক্ষা করতাম। ভারত অনেক বড় অর্থনীতিবিদ তথা মানুষকে হারাল। আমি সাত থেকে আটটি আরবিআই গভর্ণর দেখেছি। তবে কেউ মনমোহন সিংয়ের মতো এত মাটির মানুষ নন। কোনও রাজনীতিবিদের সঙ্গে তাঁর তুলনা চলে না।’