জম্মু ও কাশ্মীরের লিথিয়াম ভাণ্ডার নিয়ে উচ্ছসিত সকলেই। আর তা হবে না-ই বা কেন? লিথিয়ামকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে 'সাদা সোনা' বলে অভিহিত করা হয়। হালকা এই ধাতু লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি মূল উপাদান। আমাদের নিত্য ব্যবহারের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং কিছু ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক গাড়ির শক্তি সঞ্চয় ব্যবস্থার মূল ভিত এটি। ভারতের এই লিথিয়ামের বিপুল ভাণ্ডার দেশের অর্থনীতি ও সবুজ শক্তির প্রচেষ্টাকে অনেকটা সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই খবর দুর্দান্ত মনে হতেই পারে। তবে একইসঙ্গে আমাদের লিথিয়াম উত্তোলনের অন্ধকার দিকটির বিষয়েও শুরু থেকে ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন। এই রাসায়নিক উপাদান খনন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। আরও পড়ুন: 'শ্রেষ্ঠ মানের লিথিয়াম মিলেছে কাশ্মীরে', দাম জানলে চোখ উঠবে কপালে, ঘুরবে মাথা
লিথিয়াম উত্তোলন নিয়ে আমাদের কেন চিন্তা করা উচিত্?
এই বিশ্বের যে কোনও খনিজ সম্পদ উত্তোলনই পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। কারণ এই খনিজ অপসারণের ফলে মাটির ক্ষয়, জলের ঘাটতি, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, বাস্তুতন্ত্রের উপর এবং সর্বোপরি বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পেতে পারে।
মাটি থেকে খনিজ উত্তোলন বলতেই আমাদের প্রথমেই কয়লা এবং খনিজ তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির কথা মাথায় আসে। দুর্ভাগ্যবশত, লিথিয়ামও সেই একই তালিকার মধ্যেই পড়ে। লিথিয়াম আমাদের এক বৈদ্যুতিক ভবিষ্যতের পথ তৈরি করতে সাহায্য করতেই পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও লিথিয়ামেরও তো মাত্রা সীমিত? সহজ কথায়, সবুজ শক্তি-পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে লিথিয়াম অনুঘটক হতেই পারে। কিন্তু সেই লিথিয়াম নিজে কিন্তু পুনর্নবীকরণযোগ্য নয়।
ফলে যত বেশি বৈদ্যুতিক যান, ব্যাটারি তৈরি হবে, তত বেশি লিথিয়াম উত্তোলন হতেই থাকবে। ক্রমেই চাহিদা বাড়তে থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিথিয়াম নিষ্কাশনের ফলে মাটির ক্ষতি হয় এবং বায়ু দূষণ হয়। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে, খনির এই প্রভাবগুলি বাড়তে থাকে। এদিকে এর নিকটস্থ এলাকায় জীববৈচিত্র থেকে শুরু করে জনবসতি, সবই প্রভাবিত হয়। এই অঞ্চলে জলের জোগানে প্রভাব পড়ে।
কেন? কারণ এক টন লিথিয়াম তৈরি করতে প্রায় ২২ লক্ষ লিটার জলের প্রয়োজন হয়।
বাষ্পীভবনের মাধ্যমে জল শুকিয়ে লিথিয়াম নিষ্কাশন করা হয়। বহু সংখ্যক পুকুরের মতো জলাধারের মাধ্যমে লিথিয়ামের এই বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া চলে। বলাই বাহুল্য, এতে প্রচুর জল ব্যবহার করা হয়।

উত্তর চিলিতে লিথিয়াম নিষ্কাশন। রঙিন স্থানগুলি এক-একটি জলাধার। সেখানে লিথিয়াম বাষ্পীভবন চলছে। ছবিটি আকাশ থেকে ড্রোন/হেলিকপ্টারে তোলা। সৌজন্যে: রয়টার্স
(REUTERS/Ivan Alvarado)ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের লিথিয়াম খনিগুলির বিষয়ে যদি একটু গুগল সার্চ করেন, দেখা যাবে প্রায় প্রতিটি খনির সঙ্গেই পরিবেশ সম্পর্কিত নানা বিতর্ক জড়িয়ে। পর্তুগাল থেকে শুরু করে বলিভিয়া, চিলি, আর্জেন্টিনা- যেখানেই লিথিয়াম খনি, সেখানেই পরিবেশে গুরুতর প্রভাব পড়েছে। প্রভাবিত হয়েছে স্থানীয় প্রাণীকূল।
তবে কি লিথিয়াম উত্তোলনই বন্ধ করে দেওয়া দরকার?
গবেষকরা বলছেন, আপাতত জীবাশ্ম জ্বালানির প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে লিথিয়ামই ভরসা। কিন্তু লিথিয়ামের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের বিষয়ে আমাদের ভুললে চলবে না।
তাছাড়া সমগ্র বিশ্ব যদি বিদ্যুতচালিত যানের দিকেই ছুটতে শুরু করে, তবে একদিন অতি বৃহত্ লিথিয়াম ভাণ্ডারও কম পড়বে। কারণ একটি ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারিতেই প্রায় ১০-১৫ কিলোগ্রাম লিথিয়াম লাগে। উদাহরণস্বরূপ, টেসলার মডেল এস গাড়িতে প্রায় ১২ কিলোগ্রাম লিথিয়াম প্রয়োজন। ফলে এর বদলে অন্য কী কী পথ রয়েছে, তাই নিয়ে এখন থেকেই ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন আছে। সেই কারণেই লিথিয়ামকে আগামীর খনিজ তেল বলেও অভিহিত করছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন: দেশে এই প্রথমবার লিথিয়াম খনির খোঁজ! জিএসআই-এর আতস কাঁচে জম্মু ও কাশ্মীর
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক