রবিবার ভোরে ইজরায়েলের বিভিন্ন স্থানে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। এই প্রথমবার সরাসরি ইজরায়েলে এমন হামলা চালাল তেহরান। স্বাভাবিকভাবেই যা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেল। মার্কিন সেনা ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। তার প্রতিক্রিয়াতেই ইরানের এই পাল্টা জবাব বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনায় ১৬ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেইনি সমস্ত ইলেকট্রনিক যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি একটি সুরক্ষিত ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: আমেরিকা ইরানে হামলা করলে আমরা ছাড়ব না, হুমকি ইরানের বন্ধুর, আশঙ্কায় ইজরায়েল
ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইজরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় ৩০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুৃড়েছে ইরান। জেরুজালেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। তারপরই দেশের একাধিক শহরে সতর্কতামূলক সাইরেন বাজতে শুরু করে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে উৎক্ষেপণ হওয়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিষ্ক্রিয় করার জন্য কাজ করছে। হামলার জেরে ইজরায়েল আপাতত নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, বেন গুরিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, লজিস্টিক ঘাঁটি, একটি জৈব গবেষণা কেন্দ্র, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রসহ একাধিক ঘাঁটি এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মধ্যে ছিল দূরপাল্লার কঠিন ও তরল জ্বালানিচালিত যুদ্ধাস্ত্র। টাইমস অফ ইজরায়েল জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র হাইফা শহরে আঘাত হানে। সেখানে সাইরেন পর্যন্ত বাজেনি। জোরে বিস্ফোরণের শব্দে এলাকা কেঁপে ওঠে।
ইজরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা এমডিএ জানিয়েছে, এই হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের ফলে বেশ কিছু এলাকায় বড় ধরনের ধ্বংসের চিত্রও দেখা গিয়েছে। এরপরেই দ্রুত মেডিক্যাল টিম বিভিন্ন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে শুরু করেছে। এছাড়াও, দেশজুড়ে বাড়ানো হয়েছে সতর্কতা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সব ধরনের কাজকর্ম স্থগিত রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই পরিস্থিতির কিছু আগে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, আমেরিকান সেনাবাহিনী ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক ঘাঁটি ওপর সফল হামলা চালিয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই তিনটি কেন্দ্র সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে এবং এই হামলা অসাধারণ সামরিক সাফল্য।
একইসঙ্গে ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি জানান, যদি শান্তিপূর্ণ সমাধানে না আসে তাহলে আরও বড় হামলার মুখে পড়তে হবে ইরানকে। এদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এসব ঘটনার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি নিজের নিরাপত্তার জন্য ইলেকট্রনিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে একটি সুরক্ষিত ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন। এই অবস্থায় গোটা পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল পরিস্থিতির দিকে গভীর নজর রাখছে।
তারইমধ্যে ইরানের তরফে জানানো হয়েছে, মিথ্যে কারণ দেখিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। পরমাণু কেন্দ্রে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু আমেরিকা হামলা চালিয়েছে, বড় লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি কোনও শ্রদ্ধা দেখাইনি। ইরান বরাবর কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের পক্ষে ছিল। কিন্তু এখন কূটনীতির পথে হাঁটবে না তেহরান। কারণ আমেরিকা কূটনৈতিক বিষয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।