মানুষের মতো পাখিরাও ট্র্যাফিকের শব্দে বিরক্ত হতে পারে। গ্যালাপাগোসে গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে, যদি পাখিদের কিচিরমিচিরে মাঝে ট্র্যাফিকের শব্দ তীব্র স্বরে ঢুকে পড়ে, তাহলে ওই পাখিরা অত্যন্ত রেগে যায়। যোগাযোগ না করতে পারার হতাশা সামলাতে না পেরে অন্যান্য পাখির সঙ্গে এমনকি লড়াই করতে শুরু করে পাখিরা।
গবেষণাটি অ্যানিম্যাল বিহেভিয়ার নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। অ্যাংলিয়া রাস্কিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনরাড লরেঞ্জ রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা এই গবেষণা করেছেন। তাঁরা গ্যালাপাগোসের এক ধরনের পাখি, যারা সাধারণত গান গায় বলেই শোনা যায়, এই পাখিদের উপরই গবেষণা করেছেন। জানা গিয়েছে, এই পাখিদের নাম ইয়োলো ওয়ার্বলার।
গবেষণার জন্য, গবেষকরা স্পিকারের মাধ্যমে ওই পাখিদেরই গান বাজিয়েছেন যাতে অন্য পাখির মতো শোনায়, পাশাপাশি আরও দেখার জন্য ট্র্যাফিকের শব্দও বাজানো হয়। ফ্লোরিয়ানা এবং সান্তা ক্রুজ দ্বীপপুঞ্জের ৩৮টি জায়গায় যেখানে হলুদ ওয়ার্বলার বাস করে সেখানে এমনটাই করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণার কিছু জায়গা রাস্তার কাছাকাছি ছিল, আবার কিছু জায়গা ১০০ মিটারেরও বেশি দূরে ছিল।
এরপরেই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে অদ্ভুত তথ্য। দেখা গিয়েছে যে রাস্তার কাছাকাছি বসবাসকারী পাখিরা শব্দ শুনে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। কিন্তু রাস্তা থেকে দূরে বসবাসকারী পাখিরা একই শব্দ শুনে কম আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এআরইউ-এর গবেষক ডঃ ক্যাগলার আক্কে এ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা করেছেন যে পাখিরা তাদের এলাকা রক্ষা করার জন্য এবং আগ্রাসন দেখানোর জন্য গান গেয়ে থাকে। কিন্তু যদি যানবাহনের মতো শব্দ তাদের সেই গানে বাধা দেয়, তাহলে পাখিরা প্রতিক্রিয়া জানাতে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
এমনকি আরও জানা গিয়েছে যে রাস্তার কাছে কিংবা রাস্তা থেকে দূরে বসবাসকারী পাখিরা উচ্চ স্বরে গান গাইতে শুরু করে যাতে যানবাহনের শব্দকে তাদের গান ছাপিয়ে যেতে পারে। গবেষকরা এটা দেখেই বলেছেন যে প্রাণীদের তাদের পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এই গবেষণা বন্যপ্রাণী রক্ষায় শব্দ দূষণ কমানোর উপায় খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে।