স্তন্যপান করানো নিয়ে আজও নানা ভুল ধারণা ধারণার জালে আবদ্ধ রয়েছি আমরা। এসব ভুল ধারণা নতুন মায়েদের চিন্তাভাবনাকে ভুল পথে চালিত করে। আর তার থেকে নানা বিভ্রান্তি ও সমস্যার জন্ম দেয়। স্তন্যপান মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের পরিচায়ক। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পথে বাধা সৃষ্টিকারী মিথ বা ভুল ধারণাও আমাদের ভেঙে ফেলতে হবে। এমনই কিছু ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা করলেন চিকিৎসক নিকোলা জুডিথ ফ্লিন (হেড, পেডিয়াট্রিক্স ও নিওন্যাটোলজি, মণিপাল হাসপাতাল, ইএম বাইপাস)।
স্তন্যপান নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা
১. স্তন্যপান সব সময় সহজ এবং স্বাভাবিক: স্তন্যপান প্রাকৃতিক হলেও সব সময় সহজ নয়। কিছু মা সহজেই এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন, আবার অনেক মা ল্যাচিং, ছোট শিশু, ফ্ল্যাট স্তনবৃন্ত, বড় স্তন এবং অন্যান্য সমস্যা নিয়ে ভোগেন। যেসব মা ঠান্ডা আবহাওয়ায় থাকেন, তাদের জন্য প্রতিদিন ৪ লিটার জল পান করা কঠিন হতে পারে, যা পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনের জন্য জরুরি। এছাড়াও, হৃদরোগ এবং কিডনির সমস্যায় ভোগা মায়েদের জন্য স্তন্যপান কঠিন হতে পারে, কারণ তাদের কম জল পান করায় শরীর পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন করতে পারে না।
২. স্তন্যপান একটি যন্ত্রণাদায়ক এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া: স্তনবৃন্তে সঠিকভাবে ল্যাচিং হলে স্তন্যপান যন্ত্রণাদায়ক হওয়ার কথা নয়। তাই প্রসবের আগে বা পরে মায়েদের ল্যাচিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা এড়াতে মা, শিশু এবং শিশুকে স্তনবৃন্তে ধরার কোণ—সবকিছুই সঠিক অবস্থানে থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে, বোতলে দুধ খাওয়ানোর চেয়ে স্তন্যপান করাতে বেশি সময় লাগে। কারণ বোতলে দুধ দ্রুত বেরিয়ে আসে। স্তন্যপানের সময় শিশু চোষে, থামে এবং ঘুমিয়ে পড়ে, তাই এতে সময় লাগে।
৩.স্তনের আকার স্তন্যপানের উপর প্রভাব ফেলে: এটি একটি ভুল ধারণা যে স্তনের আকার স্তন্যপানের উপর প্রভাব ফেলে। এই বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন যে বড় স্তন বেশি দুধ উৎপাদন করে বা ছোট স্তন থেকে শিশুকে পর্যাপ্ত খাওয়ানো যায় না। কারণ একটি ছোট স্তনও যমজ শিশুকে পুষ্টি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত দুধ তৈরি করতে পারে।
৪. ফর্মুলা দুধ বুকের দুধের মতোই ভালো: প্রতিটি ফর্মুলা উৎপাদনকারী সংস্থা বুকের দুধের যতটা সম্ভব কাছাকাছি একটি ফর্মুলা তৈরি করার চেষ্টা করে। তবে, বুকের দুধই নবজাতকের জন্য সেরা পুষ্টির উৎস। এটি মায়ের দেওয়া পুষ্টি, যা বিশ্বের অন্য কোনো ফর্মুলার সঙ্গে তুলনীয় নয়।
৫. স্তন্যপানের জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার এড়িয়ে চলতে হয়: স্তন্যপানের সময় একজন মায়ের প্রতিদিন ৪ লিটার জল পান করা এবং সুষম খাবার খাওয়া উচিত। মা গরম, টক, মশলাদার বা ঠান্ডা খাবার খেলেও তা উৎপাদিত বুকের দুধের গুণমান বা পরিমাণকে প্রভাবিত করে না। এই সময় মায়েরা তাদের পছন্দের ফাস্ট ফুডও খেতে পারেন, তবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া ভালো।
৬. স্তন্যপান গর্ভধারণ প্রতিরোধের একটি পদ্ধতি: অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্তন্যপান গর্ভধারণ বিলম্বিত করতে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি গর্ভধারণ প্রতিরোধের একটি খুব অনির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। কারণ মা ল্যাকটেশনাল অ্যামেনোরিয়া অবস্থায় চলে যেতে পারেন এবং পরবর্তী গর্ভধারণ হতে পারে।
এইসব মিথ এবং ভুল ধারণা দূর করার মাধ্যমে আমরা মায়েদের সঠিক তথ্য দিয়ে ক্ষমতায়ন করতে পারি, যা তাদের স্বাস্থ্য এবং শিশুর কল্যাণের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।