সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার ঘটনার ‘শক’ এখন কাটিয়ে উঠতে পারেনি তাঁর ব্রেস্ট ফ্রেন্ড মহেশ শেট্টি। শুধু শক নয়,সঙ্গে রয়েছে একঝাঁক হতাশা,গ্লানি আর অনুশোচনা.. ‘কেন ওর শেষ ফোনটা ধরতে পারলাম না?’ এই প্রশ্ন বোধহয় আজীবন তাড়া করে বেড়াবে মহেশকে। মিডিয়া রিপোর্টে শোনা যাচ্ছিল,সুশান্ত শেষ ফোনটি করেছিলেন তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু মহেশ শেট্টিকে,কিন্তু কথা হয়নি। বৃহস্পতিবার বন্ধুকে নিয়ে লেখা দীর্ঘ পোস্ট সেই ফোনের কথা নিজের মুখেই স্বীকার করে নিলেন মহেশ। অনুশোচনা যেমন আছে তেমন রাগও আছে...১৩ বছরের বন্ধুত্বটা ছেড়ে এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল?
দীর্ঘ ইনস্টাগ্রাম পোস্টে নিজের ভাই,বন্ধু সুশান্তের জন্য হৃদয় নিংড়ানো বার্তা লিখলেন তাঁর পবিত্র রিসতা কো-স্টার মহেশ শেট্টি।
এটা একটা অদ্ভূত অনুভূতি..আমার অনেক কিছু বলবার রয়েছে,কিন্তু তবুও আমি বাকরুদ্ধ। জীবনে কখনও কখনও তোমার এমন কিছু মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত্ হয়,যে দেখা মাত্রও তুমি তাঁর সঙ্গে এক অদ্ভূত বাঁধনে জড়িয়ে পড়,মনে হয় যেন সারাজীবন ধরে ওকে চেন। তুমি বুঝতে পারো যে ভাই হতে গেলে এক মায়ের গর্ভ থেকে জন্মানোটা সবসময় জরুরি হয় না। এইভাবেই আমাদের দেখা..ভাই হিসাবে।
দুজনেই ভীষণ ইন্ট্রোভার্ট আর বন্ধুত্বের ব্যাপারে দুজনেই ভীষণ পুরোনো পন্থী,দুজনেই নিজেদের জগতে থাকতে ভালোবাসা দুই মানুষ, আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা বলে গল্প করা (ও এই পৃথিবীর যে কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলবার দক্ষতা রাখে)খাবার,ছবি, বই, প্রকৃতি,বিজ্ঞান,সম্পর্ক আর অনেক অনেক ‘বকওয়াস’….ও হচ্ছে এক ক্যান্ডির দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট ছেলে, ওর মধ্যে একটা অফুরন্ত এনার্জি এবং অগাধ স্বপ্নের একটা ভান্ডার ছিল,যা অনেক সময়ই ভীষণ ছোঁয়াছে’।
সুশান্তের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব লোকদেখানো নয় তাঁদের এই রিসতা সত্যিই ‘পবিত্র’ বলেন সুশান্তের পবিত্র রিসতা কো-স্টার।মহেশ লেখেন, আমাদের এই সম্পর্কটা ভারী অদ্ভূত, কোনওদিনও দেখনদারি ছিল না ভালোবাসাটা জাহির করবার। দুজনের জন্যই এটা ভীষণ পবিত্র। যদি আমি ওই সব মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দি করতাম তাহলে অন্তত আমি কিছু একটা আঁকড়ে ধরে থাকতে পারতাম বাকি জীবনটা। কিন্তু হ্যাঁ, তবুও আমি ধন্য,যে আমার কাছে ১৩ বছর লম্বা একটা যাত্রাপথ রয়েছে, যা সাজানো অনেক স্মৃতি দিয়ে..সেগুলো আমি যত্ন করে গুছিয়ে রাখব।ওর সাফল্য, ওর প্রাপ্তি, ওর কাজ...ও সবক্ষেত্রে একজন পারফেকশানিস্ট,আমি যাই বলি না কেন কোনওদিন ওর মতো একটা জিনিয়াসকে আমি বলে বুঝিয়ে উঠতে পারব না'।
সুশান্তের চলে যাওয়াটা মহেশের জীবনে একটা বিরাট শূন্যতা সেটা মেনে নিয়ে তিনি লেখেন, আমি কোনওদিনও ভাবিনি আমি তোকে নিয়ে এই সব লিখব। আমরা তো একসঙ্গে নিজেদের অবসর জীবনটাও প্ল্যান করেছিলাম আর এখন..আমি সবসময় জানতাম তুই ওঁনার খুব কাছের..তাই বলে তোকে এত তাড়াতাড়ি নিজের কাছে ডেকে নেবে!
তবে আমি আজীবন তোর উত্তরাধিকার নিজের মনের ভিতর বয়ে বেড়াব, আমি সেটা নষ্ট হতে দেব না। যদি এই পৃথিবীর তোর জীবনটাকেও ততটাই সেলিব্রেট করতে পারত,যতটা ওর কাজকে করেছে। মনে হচ্ছে আমার ভিতর একটা বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়ে গিয়েছে,যা আর কোনওদিনও পূরণ হবে না। আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা গুরুত্বপূরর্ন কাজে আমারা একে অপরের পাশে ছিলাম,সবসময় একজনের পাশে অন্যজন। তুমি কী করে সেই জিনিসটা ব্যাখা করবে যদি হঠাত্ করে তোমার মনের একটা অংশকে তুমি হারিয়ে ফেল? কেমন করে তুমি মনকে বোঝাবে, যখন তোমার মধ্যে এতগুলো কিন্তু,কেন,যদি’তে ভরপুর প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে! আমি দুঃখিত কিন্তু আমি অনেক অসন্তোষ নিয়েই বাঁচব। যদি আমি তোর মনের দরজাটা পুরোপুরিভাবে খুলতে পারতাম…তুই জানতিস তোর সঙ্গে শেট্টি আছে সবসময় আর থাকবেও। তাহলে কেন? একবার কথা তো বলতিস ইয়ার!!! যদি ওই ফোন কলটা আমি ধরতাম..জীবন তো আর এক রইল না রে!! আমি জানি ওই তারাগুলো তুই কতটা ভালোবাসসিত..বিশ্বাস কর মায়ের দিব্বি দিয়ে বলছি প্রতিদিন রাতের আকাশে আমি ওই দিকেই তাকিয়ে থাকব ভাই’।
মিডিয়া রিপোর্টে আগে উল্লেখ করা হয়েছিল রবিবার সকালে সুশান্ত শেষ ফোন করেন মহেশ শেট্টিকে। যদিও সেই সময় ফোনটি রিসিভ করেনি মহেশ,কথা হয়নি। এরপর বেলা ১২টা নাগাদ পাল্টা ফোনও করেন বন্ধুকে,কিন্তু ততক্ষণে সবশেষ..। পুলিশের সামনে আগেই নিজের বয়ান রেকর্ড করেছেন মহেশ শেট্টি, এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় মন খুলে বন্ধুকে নিয়ে লিখলেন মনের কথা।
গত মাসের ২১ তারিখেই ছিল মহেশের জন্মদিন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সুশান্ত বন্ধুর সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, 'আই লাভ ইউ মেরি জান'। জবাবে কমেন্ট বক্সে মহেশ লেখেন, ধন্যবাদ..মেরে জান'।