আরজি কর কাণ্ডের পর পরিবর্তনের হাওয়া চারদিকে। নির্যাতিতার খুন ও ধর্ষণে হাসপাতালের আভ্যন্তরীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। আর এই দুর্নীতির সঙ্গে বারবার নাম জড়াচ্ছে রাজ্যের শাসক দলের। যা নিঃসন্দেহে বেশ চাপে রেখেছে ঘাস ফুল দলকে। আর যার জেরে সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকেই বলছেন, ‘লঙ্কায় যে যায়, সেই রাবন’।
১৩ বছর আগে সাধারণ মানুষই ‘বদল’ আনতে চেয়ে, সরিয়েছিলেন বামফ্রন্ট সরকারকে। বামেদের উপর সেই সময় ছিল অত্যাচার, চুরি, নির্যাতন-সহ একাধিক অভিযোগ। ৩৪ বছর পুরনো একটা দল, বিধানসভা ভোটে গো হারা হারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ১৩ বছর পর আরজি কর কাণ্ডের পর সেই একইরকম প্রতিবাদের সুর চারদিকে। তরুণী ডাক্তারের হয়ে বিচার চেয়ে যেমন পথে নামছেন সাধারণ মানুষ, তেমনই শাসক ও পুলিশকে নিয়েও বাড়ছে ক্ষোভ। ‘মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’-এর দাবি উঠেছে নানা জায়গায় হওয়া ‘অরাজনৈতিক’ জমায়েত থেকে।
এবার শিলাজিতের সোশ্যাল মিডিয়াতেও একই সুর। তিনি লিখেছেন, ‘কেউ বদলায় না! সবাই একই রকম থাকে, মওকা পেলে ক্ষমতা পেলে তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তখন মনে হয় সে বদলে গেছে। অপেক্ষা করো দেখবে ঠিক যে যার নিজের আসল রূপে ধরা পড়বে।’
এরপর শিলাজিৎ আরও লিখলেন, ‘কে যে কবে ভক্ত থেকে মন্ত্রী হয়ে যাবে, বন্ধু থেকে নায়ক হয়ে যাবে, আবার সুজন থেকে শত্রু হয়ে যাবে, কেউ জানে না… যাকে সোনা মনে হবে সে যে কবে এক্সপেনসিভ বিউটি ট্রিটমেন্ট করেও গু এর মত হয়ে যাবে কেউ জানে না। বেরিয়ে আসতেই হবে নিজের রূপে। চোখ কান খোলা রেখো আর মেনে নিও।’
যদিও রাজনীতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেননি গায়ক। তবে তাঁর ইঙ্গিত যে কোনদিকে তা বুঝতে কারও সমস্যা হয়নি। শিলাজিতের পোস্টে এক নেট-নাগরিক মন্তব্য করলেন, ‘হ্যা মাল একই থাকে… মোড়ক বদলায কেবল... ঝিকিমিকি টুম্পা মোড়কের মাধ্যমে লোক ঠকানো চলে…ভেতরে সেই একই পচা মাল…।’ অপর একজন লিখলেন, ‘আর তো এসব মেনে নিতে পারছি না দাদা। একজন নির্দলীয় সাধারণ নাগরিক হিসেবে আর ভালো লাগছে না এসব।’
তৃতীয়জন লেখেন, ‘সাধারণ মানুষ সহজে বদলাবে না দাদা। বদলে যাবে কিছু মেরুদন্ডহীন বুদ্ধিজীবী সেলিব্রিটিরা।’
বলে রাখা ভালো, শিলাজিতের পোস্ট এল কাঞ্চন মল্লিক নিয়ে চারদিকে প্রতিবাদ ওঠার পরে। তৃণমূলের বিধায়ক কাঞ্চন রবিবার এক ধর্না মঞ্চ থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের বেতন-বোনাস নিয়ে কটাক্ষ করেন। যাতে প্রতিবাদ করেছিলেন তারকা থেকে সাধারণ মানুষ সকলে। এমনকী, দলের নেতা অভিষেকও সোমবার রাতে নিদান দেন, ডাক্তার-সুশীল সমাজ নিয়ে কোনও ‘বিরূপ’ মন্তব্য করা যাবে না। তারপর অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নেন অভিনেতা। যদিও সেই ক্ষমাতেও, রাগ কমেনি সাধারণের।
৯ অগস্ট সকালে কলকাতার সনামধন্য আরজি কর মেডিকেল কলেজ থেকে এক কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তারের দেহ উদ্ধার হয়। যা প্রথমে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়, জানানো হয় মেয়েটির পরিবারকে। পরে সামনে আসে, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এমনকী, খুনের পর প্রমাণ লোপাট হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে সিবিআই। পুলিশের উপর অভিযোগ, তড়িঘড়ি নির্যাতিতার সৎকার করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের সামনেই ১৪ তারিখ মেয়েদের রাত দখলের রাতে হাসপাতালে হামলা চালিয়েছিল কিছু দুষ্কৃতি। শাসক দলের ঘনিষ্ঠ, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার। ফলে সরকার ও প্রশাসনের উপর আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জমছে ক্ষোভ।