বাংলার সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান নেই। কিন্তু মনেপ্রাণে তিনি বাঙালি। তাই তো অবলীলায় বাংলা বলেন বিদ্যা বালান। রুপোলি পর্দায় তাঁর আত্মপ্রকাশ বাংলা ছবি ‘ভালো থেকো’-র হাত ধরে। আর বলিউডে তিনি জার্নি শুরু করেছিলেন ‘পরিণীতা’র সঙ্গে। বিধু বিনোদ চোপড়ার এই ছবি তৈরি হয়েছে কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিণীতা উপন্যাসকে ঘিরে।
বঙ্গতনয়া হিসাবে কেরিয়ারের শুরুতেই নজর কেড়েছিলেন বিদ্যা। আর সেই ছূি এবার ২০ বছর পূর্ণ করল। এই উপলক্ষে ছবির প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপড়া মুম্বইয়ে একটি বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের আয়োজন করেছিলেন। অনুষ্ঠানে তিনি জানান, 'শীর্ষ নায়িকারা' চাইলেও কীভাবে বিদ্যা এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
পরিণীতা ছবিতে বিদ্যা বালান কীভাবে চরিত্রটি পেয়েছিলেন? প্রযোজক বলেন, 'অনেক শীর্ষ নায়িকা পরিণীতা করতে চেয়েছিলেন। তবে প্রদীপ সরকার জানান, চেম্বুর থেকে নতুন মেয়ে এসেছে। তাই বললাম, 'চেম্বুর থেকে এই মেয়েটাকে পরীক্ষা করে দেখো। স্ক্রিন টেস্টের সময় আমি সাধারণত অভিনেতাদের সঙ্গে দেখা করি না। বিদ্যাকে অনেক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তারপর প্রদীপকে বললাম, চলো একটা ফাইনাল টেস্ট করি। তিনি এই প্রক্রিয়ায় এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি আসলে তার চূড়ান্ত অডিশনের আগে মনেমনে আমাকে গালিগালাজ করছিল। বিড়বিড় করে আমি তাকে বলতে দেখেছি, 'তিনি (বিধু বিনোদ চোপড়া) নিজেকে কী মনে করেন?' ততক্ষণে বিদ্যার ২০-২৫টি অডিশন দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারপর এমন দুর্দান্ত ফাইনাল টেস্ট দিল, এটা অবিশ্বাস্য। আমি প্রদীপকে বললাম, ওকে এক্ষুনি সিলেক্ট করে নাও'।
বিদ্যা স্মৃতি হাতড়ে বলেন,তিনি বিধু বিনোদ চোপড়ার সহকারীর সাথে এনরিকের কনসার্টে ছিলেন যখন ছবির পরিচালকের ফোন আসে। তিনি বলেন, 'তো দাদা (প্রদীপ সরকার) ফোন করেছিল, এবং আমি তাকে বলেছিলাম, 'দাদা, আমি কনসার্টের মাঝখানে আছি, আমি আপনাকে আবার কল করব। কিন্তু তিনি বললেন, 'না, মিঃ চোপড়া আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। তাই আমি বললাম, 'হ্যাঁ, কনসার্টের পরে আপনাকে ফোন করব। তখন মিঃ চোপড়া বললেন, 'তেরি জিন্দেগি বদলনে ওয়ালি হ্যায়, বাহার নিকাল (তোমার জীবন বদলে যেতে চলেছে, বাইরে এসো)। আমি বললাম, 'তুমি আমাকে কী বলবে, যে আমি আর পার্টটা পেলাম না?' আমি এক সেকেন্ডের জন্যও অন্যথায় ভাবিনি, কারণ আমি অনেক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বললেন, ‘বেরিয়ে এসো। তাই আমি বাইরে এলাম, উনি আমাকে ফোনে বললেন, তুমিই আমার পরিণীতা। আর আমি ওখানেই কাঁদতে শুরু করলাম। এটি একটি পাগলামি ভরা মুহূর্ত ছিল’।
বিশেষ স্ক্রিনিংয়ে উপস্থিত ছিলেন রেখা, দিয়া মির্জা, বিদ্যা বালান, বিধু বিনোদ চোপড়া, শ্রেয়া ঘোষাল এবং রাজকুমার হিরানি প্রমুখ। অনুষ্ঠানের একটি মিষ্টি মুহূর্ত, যেখানে বিদ্যাকে রেখার পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে দেখা গিয়েছে, যা ইন্টারনেটের মন জিতে নিয়েছে।
পরিণীতায় বিদ্যার পাশাপাশি সইফ আলি খান, সঞ্জয় দত্তের দেখা মিলেছিল। ১৯৬০-এর দশকের কলকাতায় সেট করা, গল্পটি শৈশবের বন্ধু ললিতা এবং শেখরকে ঘিরে আবর্তিত হয়, যাদের নিষ্পাপ প্রেম, ভুল বোঝাবুঝি, সামাজিক ব্যাবধান সবই ফুটে উঠেছে ছবিতে। শান্তনু মৈত্রের প্রাণবন্ত সংগীত, শক্তিশালী অভিনয় এবং বিদ্যার উপস্থিতির জন্য চলচ্চিত্রটি প্রশংসিত হয়েছিল। ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ২৯ আগস্ট থেকে এক সপ্তাহের জন্য প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হবে এই ছবি।