ফের টলিউডের অন্তর্কলহের ছবিটা সামনে এসে গেল। বিগত কয়েক মাস ধরেই ফেডারেশনের সঙ্গে পরিচালকদের দ্বন্দ্ব তুঙ্গে। এবার আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করল পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টর্স গিল্ড। মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান পরিচালকরা।
তিন মাস আগে রাহুল মুখোপাধ্যায়ের পুজোর ছবির শ্যুটিং নিয়ে ঝামেলা বেঁধেছিল টলিগঞ্জে। ‘গুপি শ্যুটিং’ করেছেন রাহুল, এই অভিযোগ এনে তাঁকে বয়কট করে ফেডারেশন। এরপরই কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল পরিচালকরা। সেই অচলাবস্থা কাটাতে শেষপর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিটিতে প্রসেনজিৎ, দেব, গৌতম ঘোষ ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং ইন্দ্রনীল সেন।
গত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল সেই কমিটির। কিন্তু মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে পরিচালকদের সংগঠন অভিযোগ করে, এখনও পর্যন্ত সেই কমিটি তৈরি হয়নি। বাধ্য হয়েই সমস্যার সমাধানে আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন পরিচালকরা।
স্বরূপ বিশ্বাস পরিচালিত ফেডারেশনের বিরুদ্ধে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। সাংবাদিক বৈঠকে হাজির ছিলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সুদেষ্ণা রায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্য়ায়রাও। পরমব্রত বলেন, ‘বাইরের কাউকে দিয়ে কাজ করাতে বাধা দিচ্ছে ফেডারেশন। ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত না হলে কাজ করতে দেওয়া হয় না। ইন্ডাস্ট্রির কোনও নিয়ম তৈরির আইনি অধিকার নেই ট্রেড ইউনিয়নের। ছোট ইউনিট নিয়ে কাজ করতে দেওয়া হয় না। প্রয়োজন ছাড়াই প্রচুর লোক নিয়ে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।’
‘কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া’র কাছে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার সমস্ত কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে ডিরেক্টর্স গিল্ডের তরফে। গুপি শ্যুটিং নিয়েও এদিন ফুঁসলেন পরমব্রত। তিনি বলেন, ভারতের কোথাউ এই শব্দ প্রচলিত নেই। একজন পরিচালক ও প্রযোজকের নিজের ইচ্ছেমতো টেকনিশিয়ান নিয়ে কাজ করার অধিকার আছে, বলে জানান পরমব্রত। টলিগঞ্জের ফেডারেশনের নিয়ম পুরোদস্তুর ‘অনৈতিক’ বলেন পরিচালক-অভিনেতা।
ফেডারেশনের ইচ্ছেয় যখন-তখন ছুটি ঘোষণা নিয়েও ফুঁসলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। বুধবার থেকে শুরু হতে চলা ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য সেদিন ছুটি ঘোষণা করেছে ফেডরেশন। অথচ পরিচালকদের কাছে সেই সংক্রান্ত তথ্য এসে পৌঁছায় সোমবার রাতে। অনির্বাণ বলেন, বুধবার তাঁর ৭০ জন শিল্পীর কলটাইম নেওয়া রয়েছে। কীভাবে তিনি শ্যুটিং করবেন জানেন না।
ফেডারেশনের নিয়মের গোড়োতে আটকে হিন্দি ছবির প্রযোজকরা বাংলায় কাজ করতে চান না, অভিযোগ পরিচালকদের। কারণ হিন্দির ক্ষেত্রে দ্বিগুণ এবং বিদেশি ছবির ক্ষেত্রে তিনগুণ টাকা নেয় ফেডারেশন। এই সব ‘দাদাগিরি’র জেরে বাংলায় কাজের পরিসর ছোট হচ্ছে, বলে জানান পরিচালকরা।