মা-কে নিয়েই নববর্ষের উদযাপনে মাতবেন সায়ক চক্রবর্তী। ছোটোবেলার পয়লা বৈশাখের সময় মায়ের দেওয়া নতুন জামার স্মৃতি এখনও তাঁর কাছে ভীষণ উজ্জ্বল। তাই হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার জন্য কলম ধরলেন অভিনেতা।
এবছরের পয়লা বৈশাখটা আমার কাছে অনেকটা আলাদা, পাশাপাশি খুব বিশেষও বটে। এই প্রথমবার আমি একটা দোকান উদ্বোধন করব। আগে এমনটা কখনও হয়নি। কাঁচরাপাড়ায় এই অনুষ্ঠানটা রয়েছে। তারপর সেখান থেকে ফিরে দুপুরবেলা একটু বাঙালি খাবার খাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে পরিবারের সঙ্গে, বিশেষ করে মায়ের সঙ্গে। তবে বাড়িতে নয়। মা নিরামিষটা বড় ভালো রাঁধলেও আমিষটা খুব একটা জমাতে পারেন না। আর আমার মা আবার বাঙালি খাবার খেতেও খুব ভালোবাসেন, তাই মাকে নিয়ে বাঙালি রেস্তোরাঁতেই দুপুরের ভোজটা সারব।
আসলে মাকে ছাড়া নববর্ষ কেন, কোনও উদযাপনই ভাবতে পারি না। একটা সময় ছিল যখন মা সারা বছর ধরে কিছু কিছু করে টাকা জমিয়ে গরমের সময় বাড়িতে যে ধরনের পাতলা পাতলা জামা পরতে পছন্দ করি, সেগুলো কিনে আনতেন। সেগুলোর মধ্যে অনেকটা ভালোবাসা লেগে থাকত। প্রতিবছর ঠিক মনে করে মা আমাকে পয়লা বৈশাখের আগে এই আনন্দে মাখা পোশাকগুলো দিত। এখন আর দেন না, মায়ের কাছে টাকা থাকলেও দেন না (মজার ছলে)। এখন উল্টোটা হয়। আমি মাকে উপহার দিই। এখন আমি নিজের জন্যও শপিং করি, আর সঙ্গে মায়ের জন্য তো বটেই। কিন্তু মায়ের ওই টাকা জমিয়ে জামা কেনার মধ্যে একটা আলাদা ভালোলাগা ছিল। ওই বিষয়টা আমি বড্ড মিস করি। ছোটবেলার এই স্মৃতিটা খুব টাটকা। নববর্ষ এলেই আমি যেন ওই সময়টাই ফিরে যাই।
শুরুতেই বলেছিলাম না এবার পয়লা বৈশাখটা খুব বিশেষ, সেটার আর একটা কারণ হল মায়ের নববর্ষের সাজ। যদিও ইতিমধ্যেই মা-কে প্রচুর শাড়ি কিনে দিয়েছি। কিছু দিন আগেই আমি শান্তিপুর গিয়েছিলাম, সেখান থেকে অনেকগুলো শাড়ি কিনে এনেছিলাম। তবে সবগুলোর মধ্যে মায়ের জন্য আনা বিশেষ ধরনের একটা পোশাক এবারের আকর্ষণ। মাকে এবার সেই ভাবেই সাজাবো। পোশাক মানে এটা নয় যে, অন্য ধরনের কিছু। সেটা আসলে শাড়িই। তবে আমাদের চিরাচরিত শাড়ির থেকে একটু আলাদা। ইন্দো-ওয়েস্টার্ন শাড়ি পাওয়া যায়, তেমনটা। এগুলোয় আলাদা করে কুচি দিয়ে পরতে হয় না। সবটাই তৈরি করা থাকে। শুধু পরে নিতে হয়। মানে রেডিমেড শাড়ি বলা যেতে পারে। তবে তাতে বাঙালিআনার কোনও খামতি নেই। এবার এই ইন্দো-ওয়েস্টার্ন শাড়িতেই পয়লা বৈশাখে মা-কে সাজাবো।
তবে আমার কাছে ছোটবেলার নববর্ষ মানে শুধু মায়ের দেওয়া নতুন জামা নয়। আমার কাছে নববর্ষ মানে রঙিন রিঙিন ক্যালেন্ডারও। ছোটবেলায় হালখাতা করার মতো টাকা-পয়সা ছিল না। তবে সব দোকানে দোকানে যেতাম। সেই সব দোকানে গিয়ে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জিনিস দেখতাম, কেউ আমাকে কিছু কিনে দিতেন না অবশ্য তখন। আমার বাড়ি ছিল সোনারপুরে। ওখানে সকলেই প্রায় আমাদের চিনতেন। তাই যে কোনও দোকানে গেলে একটা ক্যালেন্ডার, ঠান্ডা পানীয় বা সরবত, ভ্যানিলা আইসক্রিম বা টুইন ওয়ান আইসক্রিম দিতেন তাঁরা। আবার অনেক জায়গায় ফুচকা হত, সেই সব খেতাম।
আসলে সব উৎসবের সঙ্গেই কোনও না কোনও স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। জড়িয়ে থাকে আবেগ, ভালোলাগা। আমার ক্ষেত্রে নববর্ষ সেই উৎসবের তালিকায় কিন্তু বেশ উপরে। মায়ের দেওয়া নতুন জামার গন্ধ, রঙিন সরবত আর ক্যালেন্ডারের পাতাতেই যেন জড়িয়ে থাকে একরাশ উচ্ছ্বাস।