মুম্বইতে এখন ব্যস্ত তিনি, কিন্তু ভুলে যাননি নিজের শহরকে। তাই তো আবার তিলোত্তমার টানে, টলি-পাড়ায় নতুন কাজ নিয়ে ফিরছেন শোলাঙ্কি। খরব তিনি নাকি বন্দি বোকা বাক্সে! কীভাবে আটকা পড়লেন নায়িকা? সেই খবর জানার সূত্রেই, হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার সঙ্গে মায়ানগরী মুম্বইয়ে কাজ থেকে শুরু করে প্রেমের গুঞ্জন সবটা নিয়ে অকপট আড্ডায় খোলাখুলি কথা বললেন শোলাঙ্কি রায়।
সিরিজের নাম 'বোকা বাক্সতে বন্দি', আপনিও তো অনেক দিন টেলিভিশনে কাজ করেছেন, কখনও কি মনে হয়েছে যে সেখানে আটকা পড়ে গিয়েছেন?
শোলাঙ্কি: আমার ক্ষেত্রে সেরকমটা কখনও হয়নি। আমি যে কটা বছর মেগায় কাজ করেছি খুব উপভোগ করেছি। হ্যাঁ, সেখানে হয়তো অনেকটা পরিশ্রম করতে হয়, অনেকটা সময় দিতে হয়, প্রতিদিন প্রায় ১৪ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়। কিন্তু তাতে কখনও মনে হয়নি যে আটকা পড়ে গিয়েছি। কিন্তু অনেক সময় যেটা হয়, মেগায় কাজ করতে গিয়ে আরও অন্য কাজ যেমন সিরিজ, সিনেমা এগুলোতে কাজ করা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু তাও 'গাঁটছড়া' করতে করতে আমি 'শহরের উষ্ণতম দিনে' করেছি। কিন্তু কাজটা করা বেশ কঠিন ছিল। সেটা মেগার নির্মাতাদের ক্ষেত্রে, ছবির নির্মাতাদের ক্ষেত্রেও এবং অভিনেত্রী হিসেবে আমার নিজের জন্য তো বটেই।
কিন্তু এটাকে আটকে পড়া এই কারণেই বলব না, কারণ আমি কী বেছে নেব সেটা একেবারেই আমার নিজের ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার। যেমন এখন আমি টিভির কাজ একেবারেই করছি না, টেলিভিশন থেকে একটা গ্যাপ নিচ্ছি। তার কারণ, ওটাই দুটো একসঙ্গে করা বেশ কঠিন। এখন আমি মূলত ওয়েব সিরিজ, সিনেমার দিকে আরও বেশি করে মন দিতে চাই।

তাই কি মুম্বইয়ে মেগার অফারটা নিলেন না?
শোলাঙ্কি: হ্যাঁ, দেখুন মেগা সিরিয়াল যদি করতেই হয় তাহলে মুম্বইয়ে কেন? আমার নিজের শহর কলকাতায় কেন নয়? আর কলকাতায় অনেক ভালো ভালো কাজ হয় এবং আমাকে যদি সেই সব কাজের জন্য ডাকা হয়, আমি জানি ভালো চরিত্রের জন্যই অফার করা হবে। আসলে আমি কোথাও এখন টেলিভিশনটা করতে চাই না। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমি আমার কেরিয়ারকে যেভাবে দেখছি সেখানে টেলিভিশন আপাতত নেই।
আরও পড়ুন: ‘চেয়েছিলাম এমন কেউ করুক…’, তুমি আশেপাশে থাকলে-তে নতুন পারো রুকমা, কী বললেন অঙ্গনা?
আচ্ছা মুম্বই প্রসঙ্গে একটা কথা বলুন, অনেকেই মনে করেন যে বলিউডে কাজ মানে কেরিয়ারের উত্তরণ, আপনার কাছেও কি বিষয়টা তাই?
শোলাঙ্কি: উন্নতি না অবনতি সেটা আমি জানি না। কিন্তু কী ধরনের কাজ করছি সেটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে যেটা হয় একটা ন্যাশনাল প্লাটফর্মে কাজ করার ইচ্ছে তো সব সময়ই থাকে। কারণ, সেখানে দর্শকের সংখ্যা আরও বড়, বাজেট বেশি, কাজের পরিধি অনেক বেশি। আর আমার মনে হয় যে কোনও শিল্পীই একটু বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছে রাখে। আমিও সেই জায়গা থেকেই বিষয়টাকে দেখছি।
কিন্তু এই সবটা মিলিয়ে নিজেকে নিয়ে কোনও ইনসিকিউরিটি কাজ করে না?
শোলাঙ্কি: না, একেবারেই নয়। তার কারণ আমার সব সিদ্ধান্তই আমার নিজের নেওয়া। আমি জীবনের ক্ষেত্রে রিস্ক নিতে পছন্দ করি। তাই ইনসিকিউরিটির কোনও জায়গাই নেই। আমি আমার পছন্দের ওপর খুবই আত্মবিশ্বাসী, আমি নিজেকে নিয়েও আত্মবিশ্বাসী। আমি ভালো কিছু করার চেষ্টাটা সারা জীবন চালিয়ে যাব। তাছাড়া আমি নিজেকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসি, ফলে দেখাই যাক না কী হয়।
আরও পড়ুন: 'বাবা আমার কোচ', 'ফাদার্স ডে'-তে বাবা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে আবেগে ভাসলেন ছেলে ঋতব্রত
কিন্তু আপনার কনটেম্পোরারি অনেক অভিনেত্রী আছেন যাঁরা মেগায় লিড করতেন, তাঁরা এখন ছবিতে কাজ করছেন, সেই জায়গা থেকে নিজেকে যে কিছুটা সরিয়ে রেখেছেন তাতে ভয় কাজ করে না?
শোলাঙ্কি: আমিও তো দু'টো ছবিতে কাজ করেছি এবং দু'টোই লিড। আমার ছবি মানুষ পছন্দও করেছেন। তবে এখন আমি নিজেকে খানিকটা সময় দেওয়ার চেষ্টা করছি। আসলে প্রত্যেকের জার্নিটা না আলাদা হয়। ফলে সেই জায়গাটা নিয়ে আমার আক্ষেপের কিছু নেই। আর তাছাড়া আমি কখনওই নিজেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে রাখিনি। যেমন বলতে পারেন সময় মিল ছিল না বলে এতদিন হইচই-এর সঙ্গে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এই সিরিজটা করার সময় পেলাম বলে সুযোগটা এল।
সিরিজের প্রসঙ্গ যখন এল তখন একটা কথা বলুন এখানে তো দুটো চরিত্র, তো এর জন্য কি আলাদা করে কিছু ভাবতে হয়েছিল?
শোলাঙ্কি: না বরং উল্টোটা। এক্ষেত্রে ওইভাবে ভাবতেই হয়নি। তার কারণ এটা আমার প্রতিদিনের যাপন। আমি এত বছর টেলিভিশন করেছি, একটা চরিত্র হয়ে বেঁচেছি। তাই আমার মনে হয়, ওই যে অভিজ্ঞতাটা সেটা আমাকে এই কাজটা করতে অনেকটা সাহায্য করেছে।
এই যে একটা চরিত্র হয়ে দীর্ঘ যে বাঁচা সেটা কোথাও গিয়ে কী ব্যক্তি শোলাঙ্কির রোজনামচায় প্রভাব ফেলত বা প্রতিফলিত হত?
শোলাঙ্কি: না, পুরোপুরি ভাবে সেটা আমার উপর প্রভাব ফেলত এমনটা নয়, কিন্তু একটা চরিত্র করতে গেলে তো অনেক কিছু আনুষাঙ্গিক শিখতে হয়, সেই শিক্ষাগুলো সারা জীবন সঙ্গে থেকে যায়। যেমন- 'ইচ্ছে নদী'-এর সময় গানে লিপ দিতে শিখেছিলাম, 'কাদম্বিনী'-এর সময় বাঙাল ভাষা শিখতে হয়েছিল, এগুলো এখনও থেকে গিয়েছে। আবার 'গাঁটছড়া'-তে আমাকে ছবি আঁকতে হত, আমি নিজেও আঁকতে খুব ভালোবাসি। সেটা আবার 'গাঁটছড়া'-এর হাত ধরে নতুন করে শুরু করেছিলাম।
তবে আমি অতটা সচেতন ভাবেও কিছুই করিনি, তাই ওই চরিত্রগুলোর প্রতিফলন আমার উপর পড়ত কি না জানি না। এটা আমার সঙ্গে যাঁরা কথা বলতেন বা মিশেছেন তাঁরা ভালো বলতে পারবেন বলে আমার মনে হয়। তাঁরা যেহেতু আমাকে দেখছেন তাঁদের চোখে অন্য চরিত্রের প্রতিফলিতটা বেশি ধরা পড়বে।
মেগার চরিত্রের কথা যখন উঠলই সেই প্রসঙ্গে বলি, মেগার নায়িকা মানেই সে নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে অন্যকে বাঁচাতে যায়, ব্যক্তিগত জীবনে শোলাঙ্কি কি এটায় বিশ্বাসী?
শোলাঙ্কি: এটা নির্ভর করে যার জন্য করছি সেই মানুষটাকে, তাঁর কতটা সাহায্যের প্রয়োজন এবং সে আমার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর প্রতি আমার ভাবটা বন্ধুত্বপূর্ণ কিনা। এটার ওভাবে সরলীকরণ হয় না বা এক ধাঁচে আপনি পুরো বিষয়টাকে ফেলতেও পারবেন না। এটা নির্ভর করে প্রায়োরিটির উপর।
হ্যাঁ, বন্ধুত্ব তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আচ্ছা টলিউডে কাউকে বন্ধু হিসেবে বিশ্বাস করতে পারেন?
শোলাঙ্কি: হ্যাঁ, প্রান্তিক, সোহিনী এরা আমার খুব ভালো বন্ধু। আমার মনে হয় যদি কাজের জায়গায় না দেখা হয়ে বাইরে কোথাও দেখা হতো তাহলে আমরা এরকমই ভালো বন্ধু হতাম।
আর মুম্বইতে নতুন বন্ধু হয়েছে?
শোলাঙ্কি: হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার ওখানে বেশ কিছু বন্ধু আছে, নতুন বন্ধুরা আছে পাশাপাশি পুরোনো বন্ধুরাও রয়েছে।
আর প্রেম, আপনাকে নিয়ে তো অনেক প্রেমের গুঞ্জন শোনা যায়, অনেকে বলছেন, আপনি নাকি প্রেম করছেন, এটা কি সত্যি?
শোলাঙ্কি: আমি প্রেম করছি কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর এই মুহূর্তে দেওয়া একটু কঠিন।
আর সোহম মজুমদার...
শোলাঙ্কি: সোহম আমার খুব ভালো বন্ধু।

অনেকে বলছেন মুম্বইতে কাজের বিষয়ে সোহম নাকি সাহায্য করেছেন?
শোলাঙ্কি: সোহম আমাকে কাজের ব্যাপারে খুব সাহায্য করছে সেরকমটা কিন্তু একেবারেই না। এটা অত্যন্ত বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি। তাই এখানে কেউই কাউকে ওই ভাবে সাহায্য করতে পারে না। আর শুধু সোহম নন, ওখানে আমার আরও অনেক বন্ধু রয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই একে অপরকে সাহায্য করি, আমারা একে অপরের অডিশন শ্যুট করে দি, ব্যস এইভাবেই।
আর সম্পর্কে-বিচ্ছেদ, তা নিয়েও তো অনেকে অনেক কথা বললেন, অনেক আলোচনা হল, কিন্তু এ ব্যাপারে আপনার কী মত?
শোলাঙ্কি: এই আলোচনাটা আমি একেবারেই পছন্দ করি না, আমার মনে হয় ব্যক্তিগত জীবনটা ব্যক্তিগতই থাকা উচিত। এবার কারও যদি মনে হয় যে সেটা নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন সে ক্ষেত্রে তো আমার কিছু করার নেই, কিন্তু আমি সেগুলোতে খুব একটা গুরুত্ব দিতে পছন্দ করি না। স্যোশাল মিডিয়ায় অনেকেই অনেক কিছু বলে থাকেন সেই সব নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই।
স্যোশাল মিডিয়া প্রসঙ্গে এখন অনেকেই বলছেন রিল বানালে বা ফলোয়ার বেশি থাকলে নাকি কাজ পাওয়া যায়? আপনি কী মনে করেন?
শোলাঙ্কি: দেখুন রিল দেখে তো আমাকে কেউ কোন দিনও কাজে দেননি, ফলে সেক্ষেত্রে আমার পক্ষে বলাটা বেশ কঠিন। তবে হ্যাঁ এরকমটা কিছুটা হলেও হচ্ছে। তবে খুব বেশিদিন এটা হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, এটার কোনও ভবিষ্যৎ নেই। যদি এরকম কোনও ইনফ্লুয়েজার থাকেন যিনি সত্যিই অভিনয়টা পারেন, তাহলে নিশ্চয়ই তিনি থেকে যাবেন। কিন্তু যারা সেটা যারা পারেন না তাঁদের কাজ দর্শকেরও ভালো লাগবে না এবং একটা সময়ের পর তাঁদের থাকাটা তো কঠিন হয়ে পড়বেই।
আচ্ছা মুম্বইয়ে কী এরকমটা হয়?
শোলাঙ্কি: মুম্বইতে তো সেই রকম রিল দেখে দিচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। সেখানে অডিশন দিতে হয়।