প্রথম থেকেই তাঁর অভিনয়ে মজেছে দর্শক ও সমালোচকের দল। এই মুহূর্তে বাংলা সিনেমার দুনিয়ায় জেন ওয়াই তারকাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় নাম ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। বড়পর্দার বাইরেও শর্ট ফিল্ম, ওয়েব সিরিজেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি পর্দার বাইরেও অফুরান এনার্জি এবং পজিটিভ ভাইবস-এর জমাটি ককটেল ঋতব্রত। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা-র সঙ্গে এক্সক্লুসিভ আড্ডায় 'ওপেন টি বায়োস্কোপ'-এর 'কচুয়া' জানালেন ভালোবাসা নিয়ে তাঁর নানান রঙের অনুভূতি। জানালেন, বন্ধুত্ব ছুঁয়ে তাঁর ভাঙা প্রেম নিয়ে একান্ত ব্যক্তিগত সব কথা।
ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে নিশ্চয় প্রচুর প্ল্যান?
(হাসি) বিশ্বাস করুন, কোনও প্ল্যান নেই। বছর তিন-চারেক হল ভ্যালেন্টাইনস ডে কোনও 'বিশেষ মানুষ'-এর সঙ্গে কাটাচ্ছি না।
তাহলে কি রোম্যান্টিসিজমে ঋতব্রতর বিশ্বাস নেই?
না, না সেটা নয়। নিশ্চয়ই আছে। একটু খোলাখুলিই বলি তাহলে। যদি ভালোবাসার প্রসঙ্গ আসে তাহলে বলব আমাদের প্রজন্মের কাছে ভালোবাসা ব্যাপারটি বেশ অন্যরকম জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে কোনওরকম কথাবার্তা ছাড়া, কৈফিয়ৎ ছাড়া কঠিন সময়ে দু'জন বন্ধু দু'জনকে পরম উষ্ণতায় জড়িয়ে ধরেন। তৈরি হয় ভরসার জায়গা। কোনওরকম ট্যাগ ছাড়াই। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, অপর্ণা সেন পরিচালিত 'ঘরে বাইরে আজ' ছবির একটি দৃশ্যের কথা। যেখানে, একটি ঘটনার পর আবেগপ্রবণ হয়ে বহু বছরের বন্ধু অনির্বাণকে জড়িয়ে ধরেন শ্রীনন্দা শংকর। কাছে টেনে তাঁকে ভরসা যোগায় অনির্বাণ-ও। এই যে আবেগের প্রকাশের মধ্যে কিন্তু কোনও দেগে দেওয়া কোনও সম্পর্কের ছাপ নেই। আমার কাছে, ঠিক এই জায়গাটুকুই বুঝিয়ে দেয় নয়া প্রজন্মের কাছে ভালোবাসার ইঙ্গিতটুকু। আমাদের কাছে বন্ধুত্বের বৃত্তের মধ্যেও দারুণ ভালোবাসা থাকতে পারে।
অর্থাৎ ভালোবাসার নিক্তিতে নিখাদ বন্ধুত্ব তথাকথিত সম্পর্কের থেকে আপনার কাছে কম কিছু নয়?
একদমই তাই। আমি আরও একটি কথা বলতে চাই। এইমাত্র যে কথাটা বললাম, তার জের টেনেই বলি এখন যে হোয়াটস অ্যাপের ডিপিতে আমার সঙ্গে যে মেয়েটির ছবি রয়েছে, সে কিন্তু আমার একেবারে ছোট্টবেলার বান্ধবী। অনন্যা,ভীষণ কাছের বান্ধবী। প্রতি বছর ওঁর জন্মদিনে আমরা একসঙ্গে ছবি তুলি আর পোস্ট করি। তা আমার সেই বন্ধু আজ বাইরে চলে যাচ্ছে চাকরির সৌজন্যে। আমার জন্য এটা কিন্তু অসম্ভব কঠিন সময়। তাঁর জন্যও।
তাহলে এই মুহূর্তে ঋতব্রত সিঙ্গল?
ভীষণভাবে!
প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে চান না?
দেখুন, আমার ছোট থেকে একটি প্রেম ছিল। যাঁর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম সে আমার স্কুলেরই সহপাঠী ছিল। সে আমার ভীষণ প্রিয় বন্ধুও ছিল। কলেজের ফার্স্ট ইয়ার পর্যন্ত সেই সম্পর্কটি টিকে ছিল। যদিও তারপরে সেই সম্পর্কের রাস্তায় একসঙ্গে আর না হাঁটলেও, পরস্পরের বন্ধু হিসেবে আমরা কিন্তু বহাল তবিয়তেই আছি। যথেষ্ট সিরিয়াস ছিলাম সেই সম্পর্কে। তারপর আবার সেভাবে কোনও সম্পর্কে জড়াইনি।

তাহলে তো ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে একাধিক মনে রাখার মতো মুহূর্ত থাকার কথা?
(হাসি) হ্যাঁ, তা আছে। একটি মজার ঘটনা শেয়ার করি। তখন স্কুলে উঁচু ক্লাসেই পড়ি। ফাইন আর্টস-এর পরীক্ষা ছিল, প্রি-বোর্ড এর সব পরীক্ষা চলছিল আর কী। তো সেদিন ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর সত্যি কথা বলতে কী, তখন সরস্বতী পুজোতেই আমি আর ও দারুণ সেজেগুজে ঘুরতাম কিন্তু ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে তেমন কোনও মাতামাতি করতাম না। তাই বাড়ি থেকে এই দিন উদযাপন করব, এমন কোনও প্রস্তুতি নিয়েও বেরোইনি। যাই হোক, স্কুলের বাইরে বেরিয়ে দেখি আমার সেই প্রেমিকা এক গোছা গোলাপ, চকোলেট, পারফিউমের বোটল সব নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর ছিল একটি চিঠি। দেখে তো আমি হাঁ! লজ্জায় তখন এগোতে পারছি না, কারণ আমার কাছে ওঁর জন্য কোনও উপহার নেই, পকেটও প্রায় গড়ের মাঠ।
তারপর?
তারপর আর কী! (হাসি) ও দেখতে চেয়েছিল আমি ওঁকে সারপ্রাইজ দিই কি না ওই দিনে। তো তাতে ডাহা ফেল করেছিলাম। মনে আছে,বেশ একটু অভিমানও করেছিল আমার উপর। শেষমেশ কোনওরকমে ওই গাড়ি ভাড়ার টাকা থেকে এদিক ওদিকে করে ওঁর জন্য সেদিন চকোলেট কিনে রাগ ভাঙিয়েছিলাম। তবে বলি, আজ এত বছর পরেও সেই গোলাপ ফুলটা আর ওই চিঠিটি কিন্তু আজও সযত্নে রেখে দিয়েছি আমি।

আপনার ফ্যানদের জন্য প্রেম দিবসের কোনও বার্তা?
প্রতিটি বয়সের তো ভালোবাসা নিয়ে একেকরকম অনুভূতি হয় মানুষজনের। আমার এই স্বল্প অভিজ্ঞতায় ও উপলব্ধি দিয়ে যা বুঝেছি তা হল আমাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর রাস্তা খোলা রয়েছে। একসঙ্গে জোড়া লাগার মাধ্যমগুলো দিনে দিনে কমছে তাই ভালোবাসার মানুষটিকে আঁকড়ে থেকো। কোনও না কোনও ভাবে তাঁকে জানিও তোমার অনুভূতিটুকু। এমন নয় যে নিয়ম মেনে প্রতিদিন কিংবা প্রতি রাতে জানাতে হবে কিন্তু বিভিন্ন মুহূর্তে তাঁর প্রতি তোমার যে ভালোবাসা, সেটি সূক্ষ্মভাবে হলেও প্রকাশ করো। ভালোবাসা অনেকটা অক্সিজেনের মতোই। আরও ভালো করে বললে, ব্যক্তিগত অক্সিজেন। তা ধরে রেখো, ছেড়ো না।
সামনে তো পর পর ছবি আসছে।
হ্যাঁ, বেশ কিছু কাজ রয়েছে। এই তো আজকেই দু'টি প্রজেক্ট মুক্তি পেল। সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনেকদিন পর আবার কাজ করলাম। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এইট-এ একটি ছোট ছবি 'হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে' মুক্তি পেয়েছে। এর সঙ্গে আজই মুক্তি পেয়েছে বহু দিন আগে আমার একটি অভিনীত মিউজিক ভিডিয়ো। নাম, 'আবদার'।
বড়পর্দার ছবি?
হ্যাঁ, বেশ কিছু বড়পর্দার জন্য ছবিও আটকে রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সুব্রত সেনের 'প্রজাপতি' .রয়েছে নবাগত পরিচালক অরুনাভ খাসনবীশ-এর একটি অ্যান্থলজি ছবি 'নীতিশাস্ত্র'। আর রয়েছে লকডাউন-অতিমারি নিয়ে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর পরবর্তী ছবি 'উত্তরণ'। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অঙ্কুশ, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারা রয়েছেন। ওটিটি-তেও বেশ কিছু প্রজেক্ট আসছে।