দেব আবার ব্যোমকেশ, ছোঃ! ছবির কথা এবং কাস্টিং ঘোষণা হতেই অধিকাংশ নেটিজেনদের বক্তব্যই এটা ছিল। আজ অবশেষে মুক্তি পেল বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গ রহস্য’। কেমন হল ছবি? দেব কি ভক্তদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পাশ করতে পারলেন ব্যোমকেশ হিসেবে? নাকি জয় হল নেটিজেনদের জানাচ্ছে HT বাংলা।
একটা পরিবার যার এক একটি মানুষ আরেকজনকে সহ্য করতে পারে না। কেউ হিংসে করে তাঁর বৌদিকে, কেউ অপছন্দ করে বরকে। কেউ আবার শ্যালিকা তথা হবু বৌয়ের মাস্টারকে পছন্দ করে না। কারও চোখের বিষ জামাই বাবু। এমন রাজ পরিবারে পর পর চারটি খুন হল। আর তার মধ্যে তিনজনেরই মৃত্যু হল সর্পাঘাতে। কিন্তু সত্যিই কি সাপের কারণেই তাদের মৃত্যু হচ্ছে? নাকি নেপথ্যে লুকিয়ে অন্য কোনও কারণ। দুর্গের আনাচে কানাচে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস। এমন সময় ব্যোমকেশের আগমন ঘটে সেখানে। তারপর? উত্তর শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা যাঁরা পড়েছেন তাঁরা তো জানেনই বাকিরা ছবিটা দেখলে পেয়ে যাবেন। তবে বলে রাখি এ ক্ষেত্রে সিনেমায় কিন্তু বেশ কিছু বদল করা হয়েছে আসল গল্পের তুলনায়।
আরও পড়ুন-Exclusive Raj Chakraborty: রকি অউর রানি বাংলায় হলে চলত না, আমরা হিপোক্রিট: রাজ
আরও পড়ুন-Exclusive Rukmini Maitra: লোকে বলে ট্যালেন্টেড নই, অভিনয় পারি না, তবে আমি জানি আমি পরিশ্রমী: রুক্মিণী
প্রথমেই বলি দেবের ব্যোমকেশ আর চার পাঁচটা ব্যোমকেশের মতো নয়। বেশ বাণিজ্যিক ছোঁয়া রয়েছে। চেনা গতের বাইরে একটু অন্য ভাবে করার চেষ্টা করা হয়েছে ছবিটিকে যা মন্দ নয়, বরং বেশ ভালো। ব্যোমকেশ হিসেবে দেব কিছু জায়গায় সত্যি নজর কেড়েছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে আরও একটু গাম্ভীর্য বোধহয় প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ওই যে বললাম ছবিটা অন্য ভাবে করা হয়েছে, এখানে ব্যোমকেশ সত্যান্বেষীর পাশাপাশি একজন আদ্যোপান্ত ফ্যামিলি ম্যান। ফলে এটুকু আব্বুলিশ করা যায়, বলা ভালো অন্য ভাবে দেখা যেতে পারে। তবে আমার ব্যক্তিগত ভাবে দেবের অভিনয়ের ক্ষেত্রে যেটা ভালো লাগল, দিন দিন তিনি যেন আরও অনেক বেশি পরিণত হচ্ছেন, উচ্চারণগত সমস্যাও কমছে। সেটা বাহবা যোগ্য।
আরও পড়ুন: 'এই একটাই, আর ব্যোমকেশ করব না', দেবের কী অভিমান হয়েছে?
এবার বলি অজিত এবং সত্যবতীর কথা। অম্বরীশ অজিত হিসেবে মন্দ নন, গল্প কথক হিসেবে যথাযথ ভাবেই ধরা দিয়েছেন। অন্যদিকে সত্যবতী হিসেবে রুক্মিণী কিন্তু নজর কেড়েছেন। কিছু দৃশ্য সত্যি বেশ লেগেছে তাঁকে।
গল্পের মূল খলনায়ক মণিলাল, থুড়ি সত্যম ভট্টাচার্য। হিরো থেকে সোজা খলনায়ক, কিন্তু অভিনয়? ফাটাফাটি! এমন শান্ত, ধীর থেকেও একের পর এক অপরাধ মণিলাল যেভাবে ঘটিয়েছিল সেটা তিনি দুর্দান্ত ভাবে পর্দায় তুলে ধরেছেন।
রজতাভ দত্ত বা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় নিজ নিজ চরিত্রে যথাযথ। দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের যতটুকু পার্ট ছিল বলাই বাহুল্য সেটা বেশ সুন্দর। মধ্য প্রদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিছু কিছু দৃশ্য সুন্দর তুলে ধরা হয়েছে। ক্যামেরার কাজ প্রসংশনীয়।
তবে এই থিম ছবির গানের আলাদা করে প্রশংসা করতেই হবে। দীপতার্ক বসুর কাজ মনে ধরেছে বেশ।
আরও পড়ুন: 'একজন সন্তানসম্ভবা মায়ের সব কষ্টই সহ্য করেছি', সত্যবতী হওয়ার গল্প শোনালেন রুক্মিণী
এবার প্রশ্ন, এক কথায় কেমন লাগল? যদি ওভারঅল বলেন, তাহলে বলব ভালোই। কিন্তু তবুও সবটা শেষ হওয়ার পর মন ঠিক ভরল না। আসলে প্রত্যাশা অনুযায়ী আরও ভালো হতে পারত, স্কোপ ছিল। প্রথম ভাগ দ্বিতীয় ভাগের তুলনায় বেশ স্লো, বা কিছু দৃশ্য না থাকলেও বিশেষ কিছু যেত আসত না। উল্টো দিকে দ্বিতীয় ভাগ তেমনই জমজমাট। রুদ্ধশ্বাস। বিশেষ করে ক্লাইম্যাক্স বা সাপের দৃশ্যটি।
ফলে, সবটা মিলিয়ে আগামীতে দেবকে আবারও ব্যোমকেশ হিসেবে দেখতে যে মন্দ লাগবে না সেটা নিশ্চিত।
ছবি: ব্যোমকেশ ও দুর্গ রহস্য
পরিচালক: বিরসা দাশগুপ্ত
অভিনয়: দেব, রুক্মিণী মৈত্র, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, সত্যম ভট্টাচার্য
রেটিং: ৩.৮/৫