শহর জুড়ে এখন ‘বুলেট সরোজিনী’র পোস্টার। সেই পোস্টার জুড়ে একটাই মুখ, দিয়া বসু। এর আগেও একাধিক ধারাবাহিকে নজর কেড়েছেন নায়িকা। ‘জীবন সাথী’ থেকে ‘ক্যানিংয়ের মিনু’, ‘কনস্টেবল মঞ্জু’ নানা ভূমিকায়, নানা রূপে তিনি দর্শকদের মনে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু জানলে অবাক হবেন শুরু থেকে বিনোদন জগতে আসার কোনও পরিকল্পনাই ছিল না অভিনেত্রী। হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, মায়ের ইচ্ছেতেই পা রাখেন টলিপাড়ায়, তারপর নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেন এই লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়াকে।
হিসাবশাস্ত্রে স্নাতক (বি.কম অনার্স) নায়িকা। একটা সময় কত্থক নৃত্যই ছিল দিয়ার এক মাত্র ধ্যান-জ্ঞান। এই নৃত্যকলাকে ভিত্তি করেই জীবনে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলাম এমনটা কিন্তু নয়। আমি নাচটা নিয়েই কেরিয়ারে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। তবে আমার মায়ের এই দিকে অনেকটা ইচ্ছে ছিল। মায়ের ইচ্ছে থেকেই প্রথমে এই প্রফেশনে আসা। তারপর কাজ করতে করতে আমার অভিনয়ের প্রতি একটা অদ্ভুত টান তৈরি হয়ে যায়, আমি ভালোবেসে ফেলি এই অভিনয়ের জগৎটাকে।’
তবে বিনোদন জগতে খ্যাতি, প্রাপ্তি যেমন থাকে পাশাপাশি থাকে অনিশ্চয়তাও। কিন্তু সেই জায়গা থেকেও সব সময় বাবা-মা তথা পুরো পরিবারকে পাশে পেয়েছেন দিয়া। অভিনেত্রীর কথায়, ‘বাবা-মা এবং আমার পরিবার সব সময় আমার কাজের ক্ষেত্রে আমার পাশে থেকেছেন। সব সময় আমাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মোটিভেট করেছেন। হ্যাঁ, এ কথা সত্যি যে এই পেশায় একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু আমার মা-বাবা বা আমি কেউই আমার কাজের থেকে এই ভয়টাকে ছাপিয়ে যেতে দিইনি। ওঁরা কখনও আমাকে ডি-মোটিভেট করেননি।’
বাস্তব জীবনে দিয়া সব সময় পাশে বাবা-মাকে পেলেও, পর্দার ‘সরোজিনী’র ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারে আলাদা। দিয়ার চোখে ‘সরোজিনী’ ঠিক কেমন? প্রশ্নে নায়িকার উত্তর, ‘হ্যাঁ, সরোজিনীর জীবন অনেক কঠিন। সে সাংবাদিক হতে চায়। সেটার একটা জার্নি আছে। তাছাড়াও ওর একটা অতীত আছে, নিজের বাবা-মাকে খুন হতে দেখেছে সে। সব মিলিয়ে চরিত্রটায় অনেকগুলো স্তর আছে।’
তাঁর কথায়, ‘এমন চরিত্র যে কোনও অভিনেতার কাছেই খুব আকর্ষণীয়।’ তবে দিয়ার সঙ্গে আরও একটা অমিল আছে 'সরোজিনী'র। মেগায় 'সরোজিনী' বেশ বুলেটের গতিতে বাইক চালায়। তবে বাস্তবে দিয়া তা খুব একটা পারেন না। এই প্রসঙ্গে নায়িকা বলেন, ‘আমি বাইক চালাতে পারিনা, তবে শেখার খুব চেষ্টা করছি।’ কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রোমোতে তাঁকে বাইক চালাতে দেখেছেন দর্শকরা। তবে তার নেপথ্যে রয়েছে ক্যামেরা আর নানা যন্ত্রের কারসাজি।
কিন্তু এমন একটা চরিত্র তাই কেবল বাইক চালানো নয়, আরও নানা ভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে দিয়াকে। যদিও সেটার জন্য খুব বেশি সময় পাননি নায়িকা। কারণ মেগার জন্য তিনি নির্বাচন হওয়ার কিছুদিন পর থেকে শুরু হয়ে গিয়েছিল ধারাবাহিকের কাজ।
নায়িকার কথায়, ‘সাংবাদিকের চরিত্র তাই আলাদা করে একটা হোমওয়ার্কের প্রয়োজন তো ছিলওই। তবে সত্যি কথা বলতে কী, আমি চরিত্রটা পাওয়ার পর নিজেকে তৈরি করার জন্য আলাদা করে খুব বেশি সময় পায়নি। আমাদের কাজ শুরু হয়ে যায়। কাজটা করতে করতেই আমি নিজেকে তৈরি করছি। গল্পটা যত জানছি চরিত্রটাকে তত বেশি করে আরও চিনতে পারছি। প্রতিদিন একটু একটু করে চরিত্রটাকে জেনে বুঝে শিখে নিচ্ছি। এক্ষেত্রে অবশ্য বুলেট সরোজিনীর পুরো টিম আমাকে খুব সাহায্য করছেন।’
আর পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার? অভিনেত্রীর কথায়, ‘এর আগে আমার স্বর্ণেন্দুদার সঙ্গে সেই ভাবে আলাপ ছিল না। কিন্তু ওঁর ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছি। সকলের মুখে শুনেছি যে, তিনি কত ভালো একজন পরিচালক। সেখান থেকেই আমার স্বর্ণেন্দুদার সঙ্গে কাজ করার একটা ইচ্ছে তৈরি হয়েছিল। ওঁর সব গল্পগুলোই খুব মন ছুঁয়ে যাওয়া, বাস্তবের সঙ্গে অনেকটা মিল। তাই সবাই চট করে রিলেট করতে পারেন। তাছাড়াও গল্পগুলোয় একটা নতুনের ছোঁয়া থাকে। আর অভিনেতা মাত্রেই নতুন গল্প, অন্যরকমের চরিত্র সব সময়ই টানে। প্রতিদিন আমি কাজ করতে গিয়ে স্বর্ণেন্দুদার থেকে অনেক কিছু শিখছি। ছোট ছোট ইমোশন গুলোকে কীভাবে ছুঁতে হয় সেটা আমি আরও ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি।'
তবে কেবল পরিচালক নন, সেটের বাকি সকলের সঙ্গেও সুসম্পর্ক পর্দার ‘সরোজিনী’র। দুই নায়ক অভিষেক বীর শর্মা ও অর্ণব বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইতিমধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। তাছাড়াও শ্রীময়ী চট্টরাজ থেকে ধারাবাহিকের অন্যান্য কলাকুশলী সকলের সঙ্গেই বেশ মিষ্টি সম্পর্ক দিয়ার।
বর্তমানে অভিনেত্রীকে পর পর ধারাবাহিকে দেখা গেলেও, কেবল ছোট পর্দায় নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতে চান না দিয়া। সিরিজ এবং সিনেমা সব ক্ষেত্রেই সমান ভাবে কাজ করতে চান। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সিরিজের অফারও পেয়েছিলেন নায়িকা। কিন্তু মেগার দায়িত্ব অনেকখানি। সেখানে অনেকটা সময় দিতে হয়। তাই সেই জায়গা থেকে আর আলাদা করে অন্য কাজের জন্য সময় বের করে উঠতে পারেনি নায়িকা। তবে এই নিয়ে দিয়ার কোনও আক্ষেপও নেই।
অভিনেত্রীর কথায়, ‘আমার কোনও কিছুর জন্য আক্ষেপ হয় না। একটা জিনিস মনে করি আমার জন্য যে যে কাজ আছে। এগুলো আমার হবেই। আমি মনে করি এখনও পর্যন্ত যা যা কাজ আমি করে এসেছি সেগুলোই আমার জন্যই ছিল। যে কাজগুলো হাতছাড়া হয়েছে, সেই কাজগুলো আসলে আমার জন্য ছিলই না। ভবিষ্যতের খাতায় আমার জন্য যা যা কাজ সঞ্চিত আছে তা আমার হবেই।’
৫ মে অর্থাৎ আগামী সোমবার থেকে স্টার জলসার পর্দায় 'বুলেট সরোজিনী' মেগায় 'সরোজিনী' হয়ে ধরা দেবেন দিয়া। সোম থেকে রবি প্রতিদিন বিকেল ৫টা বেজে ৩০ মিনিট থেকে এই ধারাবাহিক সম্প্রচারিত হবে।