প্রবীণ অভিনেতা অনুপম খের ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা সম্পর্কে কথা বলার জন্য একটি আবেগময় ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন। এমন স্পর্শকাতর সময়ে কাজের জন্য দেশ ছাড়ার জন্য ভারাক্রান্ত মনে সামনে এলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা।
ভিডিয়োতে অনুপম উল্লেখ করেছেন যে, তিনি প্যাকিং করছিলেন এবং বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তবে মনে একটুও উত্তেজনা পাচ্ছেন না তাঁর পরবর্তী সিনেমা ‘তানভি দ্য গ্রেট’-এর জন্য। এই বছর কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে, যা ১৩ মে শুরু হবে।
ভিডিয়োর ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘দেশই একমাত্র, যা আপনাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। আমার মনটা একটু ভারী হয়ে আসছিল, তাই ভাবলাম মনের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরি। আর বুঝতেই পারিনি ভিডিয়োটা এ লম্বা হয়ে গিয়েছে! ভালো লাগলে পুরোটা দেখে নিন! বেশি ভালো লাগলে আপনিও শেয়ারও করতে পারেন! জয় হিন্দ! #India #Hindustan।’
ভরত আর আমি ভাইবোনের মতো বড় হয়েছি, বললেন অনুপম
প্রায় ৯ মিনিটের ভিডিয়োতে অনুপম বলেন, ‘যখনই আমি হতাশ বোধ করি, তখন আমি ভাবি যে আমি কোথা থেকে শুরু করেছিলাম এবং আজ কোথায় পৌঁছেছি। এটা আমাকে শক্তি জোগায়। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি আমার দেশের চেয়ে মাত্র আট বছরের ছোট। ভরত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন হয় এবং আমার জন্ম ১৯৫৫ সালের ৭ মার্চ। আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি- ভাইবোনের মতো।’
তিনি ভিডিয়োতে আরও বলেন যে, তিনি তাঁর জীবনের সমস্ত সাফল্যের জন্য কৃতজ্ঞ এবং এটি কেবলমাত্র সম্ভব হয়েছে তিনি যে দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন তার কারণে।
'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' অভিনেতা আরও বলেন, ‘৪৩ বছর আগে পকেটে ৩৭ টাকা নিয়ে এই শহরে এসেছিলাম। এখন ৫৪৫টি সিনেমার কাজ শেষ করেছি। আমি ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। এখন আমার একটি গাড়ি আছে, একটি বাংলো আছে এবং সর্বোপরি আমার মা আছে। কে দিয়েছে এসব? এই দেশ দিয়েছে। অবশ্যই, আমরা কঠোর পরিশ্রম করি, কিন্তু এই ভূমিই আমাদের স্বপ্নকে সম্ভব করে তোলে।’
ভিডিয়োর শেষপ্রান্তে অভিনেতা বলেন, ‘আমরা অবিশ্বাস্য একটি দেশ। তেরঙ্গা, ভারত মাতা কি জয়, এগুলো ক্যাথারটিক শব্দ। এ কথা বলার পর ক্যাথারসিস হয়। এই কথাগুলো কি শুধু সৈনিকদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ? না, নাগরিকদের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি আমরা কয়েকজন সাহসী সৈনিককে হারিয়েছি। তাদের পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তাদের কষ্টের কথা ভাবলেই নিজের দুঃখকে ছোট মনে হতে শুরু করে।’
‘আপনাদের সঙ্গে সব কথা শেয়ার করার পর খুব ভালো লাগলো। এই বয়সে কেউ খুব তাড়াতাড়ি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে কি না জানি না। বয়স নিয়ে খুব একটা ভাবি না, আসলে নিজেকে ভেতর থেকে ভয়ডরহীন মানুষ মনে করি। কিন্তু যখন আপনার দেশের কথা আসে... তখন… একমাত্র আপনার দেশই আপনাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে’, নিজের কথা শেষ করেন অনুপম খের।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা
পহেলগাঁও-এর জঙ্গি হামলার পর, অপারেশন সিঁদুর দিয়ে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের ন'টি গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি শিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে। যে তালিকায় লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের জঙ্গি শিবিরও আছে। স্রেফ একটা রাতেই খতম করে দেওয়া হয়েছে একাধিক শীর্ষ জঙ্গিনেতাকে, যারা ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্ট’-এ ছিল।
এরপর পাকিস্তান নির্লজ্জভাবে ভারতের নাগরিকদের উপর হামলা চালাতে থাকে। পাঠাতে থাকে ড্রোন, মিসইল। যদিও বেশিরভাগ চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। এরপর শনিবার সংঘর্ষবিরতির ডাক দেয় পাকিস্তান। নিজেরাই যোগাযোগ করে ভারতের সঙ্গে। তবে ফের নিজেদের নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়ে, সংঘর্ষ বিরতির কয়েক ঘণ্টা কাটতেই হামল করে। এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও, চাপা উত্তেজনা রয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকাতে।
অনুপম খেরের কাশ্মীর ত্যাগ
প্রসঙ্গত, অনুপম খের শ্রীনগরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে ১৯৯০-এর দশকে সংঘাতের কারণে কাশ্মীর ছেড়ে চলে আসে তাঁর পরিবার। অনুপম খেরের পরিবার কাশ্মীর ছেড়ে আসার পর, তিনি মুম্বইয়ে বড় হন। অনুপম খের তাঁর সিনেমা 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস'-এর মাধ্যমে কাশ্মীরি হিন্দুদের উপর হওয়া অত্যাচার ও বাস্তুচ্যুৎ অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন, যা অনেক বিতর্ক তৈরি করে। বরাবরই এই নিয়ে সরব হতে দেখ গিয়েছে তাঁকে।