কার যে ভাগ্য কখন ঘুরে যায় সেটা আগে থেকে বোঝা বড় দায়। এই যেমন প্রেম সিং তামাং। ২০১৩ সালে এই প্রেম সিং তামাংই সিকিম ক্রান্তিকারি মোর্চা গঠন করেছিলেন। তৎকালীন সিকিমের মুখ্য়মন্ত্রী পবন কুমার চামলিংয়ের বিরুদ্ধে তিনি রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। এরপর তিস্তা আর রঙ্গিত দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে যায়। আর সেই প্রেম সিং তামাংয়ের দল এবার সিকিমে ৩২টি আসনের মধ্য়ে ৩১টিতে জয়ী হয়েছে। এর আগে ১৯৮৯ সালে সিকিম সংগ্রাম পরিষদ ও ২০০৯ সালে এসডিএফ এই বিপুল জয় পেয়েছিল। এবার ম্যাজিক দেখালেন প্রেম সিং তামাং।
বয়স ৫৬ বছর। অত্যন্ত দক্ষ সংগঠক বলে পরিচিত। ধরে খেলেন তিনি। ধীরে ধীরে জনতার মধ্য়ে নিজের প্রভাব বিস্তার করেছেন। আর তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে। তাঁর জনপ্রিয়তার একটা বড় দিক হল তিনি নারী কল্যাণের উপর বরাবর জোর দিয়েছেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে এগিয়ে আনতে তিনি বার বার নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার পর তাঁর কেন্দ্রীয় ফান্ডিং আনতে আরও সুবিধা হত। তবে পরে অবশ্য় আসন সমঝোতাজনিত কারণে সেই জোট ভেঙে গিয়েছিল।
কালু সিং তামাং আর ধ্যান মায়া তামাংয়ের সন্তান প্রেম সিং তামাং। তিনি পড়াশোনা করেছেন কিন্তু এই বাংলাতেই। দার্জিলিংয়ের কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট। ১৯৯০ সালে তিনি শিক্ষকতা করতেন। ৯৪ সালে চাকরি ছেড়ে তিনি এসডিএফ তৈরি করেন। ১৫ বছর মন্ত্রী ছিলেন। দুর্নীতির দায়ে এক বছর জেলও খেটেছেন।
এবার সিকিমের মুখ্য়মন্ত্রীর চেয়ারে বসতে পারেন প্রেম সিং তামাং। তিনি পিএস গোলে নামেও পরিচিত। সিকিমের দ্বিতীয়বার মুখ্য়মন্ত্রী হতে পারেন তিনি। তাঁর দল সিকিম ক্রান্তিকারি মোর্চা বিপুল জয় পেয়েছে। স্কুল শিক্ষক থেকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে। ১৯৯৪ সালে প্রথম বিধায়ক হয়েছিলেন।
পবন কুমার চামলিংয়ের হাত ধরে এসেছিলেন রাজনীতিতে। রাজনীতিতে গুরু বলতে ছিলেন চামলিংই। কিন্তু মন্ত্রিত্ব পাওয়া নিয়ে দুজনের ঝামেলা হয়েছিল। এরপর শুরু হয়েছিল দ্বন্দ্ব। ২০০৯ সালে পবন সরকারের বিরুদ্ধে রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সমাবেশ করে নিজের শক্তি জাহিরও করেছিলেন। এরপর গুরু-শিষ্য়ের ঝামেলা একেবারে তুঙ্গে ওঠে। তারপর তা চরম আকার ধারণ করে। এরপর সিকিম ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন প্রেম, তৈরি হয়েছিল সিকিম ক্রান্তিকার মোর্চা। আর এবারের ভোটে পরাজিত পবন।