চলতি বিশ্বকাপে আফগানিস্তান একেবারে সকলকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। স্বপ্নের ছন্দে তারা রয়েছে। ইতিমধ্যে তারা তিন বিশ্বজয়ী দল- ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ছয় ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জিতে ছয় পয়েন্ট তাদের। জোরালো ভাবেই রয়েছে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে।
মাত্র আট বছর আগে ২০১৫ সালে বিশ্বকাপে আত্মপ্রকাশ হয়েছিল আফগানিস্তানের। সেই বার তারা একটি ম্যাচ জিতেছিল। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে আফগানরা বিশ্বকাপের একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। কিন্তু ২০২৩ সালে একেবারে অন্য মেজাজে রশিদ খানরা। দলের এমন ভোলবদলের পিছনে বড় মাস্টারস্ট্রোক হল দুই ভারতীয়কে মেন্টর এবং ব্যাটিং কোচ হিসাবে নিযুক্ত করা। এবং তারা দুই জনই গুজরাটি। তাই বলা যেতেই পারে, দুই গুজরাটির জাদুকাঠির স্পর্শে বদলে গিয়েছে পুরো খোলনলচে বদলে গিয়েছে আফগানিস্তানের।
আফগান দলের মেন্টর অজয় জাদেজা, যিনি জামনগরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাক্তন ভারতীয় তারকার পরামর্শই এখন আফগানিস্তানের আসল দাওয়াই। পাশাপাশি তো রয়েছেন তাদের ব্যাটিং কোচ মিলাপ মেওয়াদা। প্রাক্তন প্রথম-শ্রেণীর এই প্লেয়ার আবার মেহসানার বাসিন্দা। আর মিলাপের কৃতিত্ব তো আফগান ব্যাটারদের পারফরম্যান্সেই প্রমাণিত। এছাড়াও আমুল, আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের অফিসিয়াল স্পনসর হিসাবে কাজ করে, যা তাদের অনুপ্রেরণামূলক গল্পের সঙ্গে গুজরাটের সংযোগকে আরও দৃঢ় করে।
আরও পড়ুন: আমার পেশাদারিত্বের অভাব ছিল- নিজের সম্পর্কে কোহলির সাফ স্বীকারোক্তি
অজয় জাদেজা, ৯০-এর দশকের ক্রিকেটের সঙ্গে সমার্থক নাম। ভারতের এই প্রাক্তন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার নানা দিক থেকেই বর্ণময়। ২২ গজে তাঁর গতিশীল ফিল্ডিং, নির্ভীক ব্যাটিং এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল আচরণের জন্য তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর রানিং বিটউইন দ্য উইকেট সে সময় অনেকের কাছে উদাহরণ ছিল। অক্টোবরে বিশ্বকাপের ঠিক আগে ৫২ বছর বয়সী এই প্রাক্তন ক্রিকেট তারকাকে আফগানিস্তান তাদের ক্রিকেট দলের মেন্টর হিসাবে নিযুক্ত করেন।
ভারতের নির্ভরযোগ্য মিডল অর্ডার ব্যাটার দেশকে ১৩টি ওয়ান ডে ম্যাচেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। খেলেছেন ১৯৬টি ম্যাচ। ৩৭.৪৭ গড়ে করেছেন ৫৩৫৯ রান। ছ’টি সেঞ্চুরি এবং ৩০টি হাফসেঞ্চুরি। দেশের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে মাত্র ২৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস, তাঁর ক্যারিয়ারের একটা স্মরণীয় মুহূর্ত। ১৯৯২-২০০০ পর্যন্ত ১৫টি টেস্টও খেলেছেন। এছাড়া জাদেজার ভারতের হয়ে ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ২৬.১৮ গড়ে ৫৭৬ রান করেছেন। চারটি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর। ৯৬ তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর।
আরও পড়ুন: প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ম্যাচেও খেলা হবে না উইলিয়ামসনের, চোট নিয়ে আপডেট দিল ব্ল্যাকক্যাপস
২০০০ সালে একটি ম্যাচ গড়পেটায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন জাদেজা। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয় তাঁকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে মরিয়া হয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদনও করেছিলেন তিনি। যদিও তা খারিজ করা হয়। নির্বাসন কাটিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে রাজস্থান টিমের প্লেয়ার তথা কোচ হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ধারাভাষ্যও দিয়েছেন। এবার নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফুল ফোটাচ্ছেন জাদেজা।
এদিকে ৪৮ বছর বয়সী মিলাপ মেওয়াদারের ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিংয়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি জম্মু কাশ্মীর এবং হায়দরাবাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে দলে যোগ দেওয়ার আগে কয়েক সপ্তাহ আফগানিস্তানের সঙ্গে কাজ করেছেন মেওয়াদা। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে দলের ক্যাম্পে ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের হেড কোচ ছিলেন। একই সময়ে বরোদা টিমের সতীর্থ ইরফান পাঠান মেন্টর হিসাবে দলে যোগ দেন।
উইকেটকিপার ব্যাটার মিলাপ মেওয়াদারের প্লেয়ার জীবনের ক্যারিয়ার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। শুধুমাত্র ১১টি প্রথম শ্রেণির এবং ২৬টি লিস্ট এ ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। শেষ পেশাদার ম্যাচ খেলেছিলেন ২০০৪ সালে। এর পর কোচিংয়ে নামেন। বরোদার সহকারী কোচও ছিলেন তিনি। তাঁর কোচিংয়ে ছত্তিশগড়ের অনূর্ধ্ব-১৯ দল ঘরোয়া টুর্নামেন্টের নকআউটে পৌঁছেছিল।