আমরা যতই স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হই না কেন, হঠাৎ করে এক একটি পরিস্থিতি আমাদের পুরো পরিবারের আর্থিক ও মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। চিকিৎসার খরচ এখনকার দিনে এতটাই বেশি, যে একটিমাত্র অসুস্থতা সারাজীবনের সঞ্চয় শেষ করে দিতে পারে।
এই অনিশ্চয়তা থেকে বাঁচার অন্যতম পথ হচ্ছে স্বাস্থ্য বীমা। এটি শুধু আপনাকে অর্থনৈতিকভাবে সুরক্ষা দেয় না, বরং আপনাকে মানসিক নিশ্চিন্ত করে।
অনেকেই ভাবেন, এখন তো সুস্থ আছি, বীমা কেন করব? কিন্তু বাস্তবতা হল, স্বাস্থ্য বীমা আগে থেকে থাকলেই তার সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তাই, এই ব্লগটির মাধ্যমে আমরা সহজ ভাবে জানব, কেন স্বাস্থ্য বীমা আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য খুব জরুরি।
স্বাস্থ্য বীমা কী ?
স্বাস্থ্য বীমা হল একটি আর্থিক সুরক্ষা পরিকল্পনা, যা অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার ফলে চিকিৎসার খরচ কভার করে।
এই বীমা পলিসি অনুযায়ী, আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন, এবং যদি আপনি বা আপনার পরিবারের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তাহলে বীমা কোম্পানি সেই খরচের পুরোটা বা একটি নির্দিষ্ট অংশ পরিশোধ করে দেয়।
স্বাস্থ্য বীমা সাধারণত যেসব খরচ কভার করে:
- হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খরচ
- ডাক্তার ফি
- অস্ত্রোপচার ও ওষুধপত্র
- ডায়াগনস্টিক টেস্ট
- কিছু ক্ষেত্রে প্রিভেন্টিভ হেলথ চেকআপ
এটি শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, বরং একটি নিরাপত্তা, যা আপনাকে ও আপনার পরিবারকে চিকিৎসা সংক্রান্ত হঠাৎ খরচ থেকে রক্ষা করে।
স্বাস্থ্য বীমা কেন প্রয়োজনীয়
চিকিৎসার খরচ বহন করে
আজকাল একবার হাসপাতালে ভর্তি হলে শুধু বেড চার্জ, ডাক্তার ফি আর কিছু পরীক্ষা করাতে গেলেই হাজার হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। বড় রোগ হলে তো কথাই নেই, অপারেশন, ওষুধপত্র, ICU, সব মিলিয়ে লাখ টাকার ধাক্কা। এই রকম খরচ হঠাৎ এলে অনেক পরিবারই অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য বীমা থাকলে অন্তত একটা বড় অংশ -র মতো বীমা সংস্থা বহন করে নেয়। এতে পরিবারের বাকি খরচগুলোও চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।
পরিবারের সবার জন্য সুরক্ষা
স্বাস্থ্য বীমা মানে শুধু নিজের জন্যই নয়, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের কথাও ভাবা। অনেক বীমা পলিসি আছে, যেখানে আপনি পরিবারের যুক্ত করতে পারবেন, যা একটি মাত্র পলিসিতে কভার হয় । এতে প্রিমিয়াম একটু কম হয় এবং পুরো পরিবারই সুরক্ষিত থাকে। একজনের জন্য আলাদা পলিসি করার ঝামেলাও থাকে না।
বয়স্ক সদস্যদের জন্য বিশেষভাবে জরুরি
পরিবারে বাবা-মার বয়স যদি একটু বেশি হয়, তাহলে তাদের জন্য নিয়মিত চিকিৎসার প্রয়োজন হতেই থাকে। ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, হৃদরোগ ইত্যাদি বয়সজনিত অসুস্থতা খুব সাধারণ। এই ধরনের চিকিৎসার খরচ মাসে মাসে অনেক হয়ে দাঁড়ায়। যদি আপনার স্বাস্থ্য বীমা তাদেরও কভার করে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে অনেক টাকা সাশ্রয় হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা করানোও সম্ভব হয়।
ক্যাশলেস চিকিৎসার সুবিধা
আজকাল বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বীমার ক্যাশলেস অপশন থাকে যেখানে কোম্পানির সাথে হাসপাতাল-এর সরাসরি যোগাযোগ থাকে। এই ব্যবস্থা থাকলে জরুরি পরিস্থিতিতে আপনাকে টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয় না। শুধু স্বাস্থ্য কার্ড দেখিয়েই চিকিৎসা শুরু করা যায়।
অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য বীমার আর একটি সুবিধা হলো, আপনাকে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতির জন্য তৈরি রাখে। এটি বাস্তব, যে জরুরি পরিস্থিতি কোনো সুবিধাজনক সময় দেখে আসেনা। যেকোনো দুর্ঘটনা হোক বা অসুস্থতা, স্বাস্থ্য বীমা আমাদের নির্দ্বিধায় তৎক্ষনাৎ সঠিক চিকিৎসা পেতে সাহায্য করে। অতএব, এই স্বাস্থ্য পরিকল্পনা আপনাকে, আপনার দুঃসময় সব থেকে বেশি সাহায্য করবে।
ট্যাক্স ছাড়
যদিও এটা সরাসরি পারিবারিক উপকার নয়, তবে আর্থিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি পরিবারভিত্তিক স্বাস্থ্য বীমার জন্য প্রিমিয়াম দেন, তাহলে তার উপর আয়কর ছাড় পাওয়া যায়। ভারতীয় আয়কর আইনের ৮০D ধারা অনুযায়ী, নিজে, জীবনসঙ্গী, সন্তান ও পিতামাতার জন্য দেওয়া প্রিমিয়ামের উপর আলাদা আলাদা ছাড়ের ব্যবস্থা আছে।
ভবিষ্যতের জন্য তৈরি থাকা
আজ হয়তো আপনি চাকরি করছেন, আয়ের উৎস স্থায়ী আছে। কিন্তু হঠাৎ চাকরি চলে গেলে বা আয়ে ছেদ পড়লে, চিকিৎসা খরচ চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়তে পারে। আগে থেকে স্বাস্থ্য বীমা থাকলে অন্তত চিকিৎসার খরচ নিয়ে একটা নিশ্চিন্ততা থাকে।
যারা তরুণ বয়সে স্বাস্থ্য বীমা নেন, তারা কম প্রিমিয়ামে বেশি কভার পেতে পারেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রিমিয়ামের পরিমাণও বাড়ে, তাই আগে থেকেই শুরু করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
নিরাপত্তার অনুভব
সবচেয়ে বড় যে উপকারটা হয়, তা হলো, মন থেকে ভয় বা দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যায়। পরিবারে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে, চিকিৎসার খরচ নিয়ে ভাবার দরকার হয় না। আপনি জানেন, আপনার পলিসি অনুযায়ী বীমা সংস্থা চিকিৎসার বড় অংশ কভার করবে। এই নিশ্চয়তা পুরো পরিবারকেই মানসিকভাবে স্থির রাখে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
একাধিক দাবির সুবিধা
পরিবারের একাধিক সদস্য যদি একই বছরে অসুস্থ হয় বা চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে স্বাস্থ্য বীমা কাজে আসে। ফ্যামিলি ফ্লোটার পলিসিতে নির্দিষ্ট মোট পরিমাণ টাকা থাকে যেটা পরিবারের যেকোনও সদস্যের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যায়।
যেমন, এক বছরে প্রথমে সন্তান ভর্তি হলো, কিছুদিন পরে বাবার চিকিৎসা দরকার হলো, এই দুই ক্ষেত্রেই আপনি একই পলিসি থেকে দাবি তুলতে পারবেন, যতক্ষণ না পুরো কভারেজ সীমা শেষ হচ্ছে। এতে করে একাধিক সদস্যের জন্য আলাদা আলাদা বীমা করার দরকার পড়ে না।
স্বাস্থ্য বীমা নির্বাচনের সময় বিবেচনা করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
- কভারেজ সীমা: আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি অনুযায়ী উপযুক্ত কভারেজ বেছে নিন।
- কোন কোন রোগ কভার করে: বিশেষ করে প্রি-এক্সিস্টিং ডিজিজ যেমন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ-এসবের কভারেজ নীতি পড়ে বুঝে নিন।
- ওয়েটিং পিরিয়ড: অনেক সময় কিছু রোগের জন্য নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হয়। এটি আগেভাগেই জেনে নেওয়া ভালো।
- ক্যাশলেস হাসপাতাল নেটওয়ার্ক: বীমা কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হাসপাতালের তালিকা দেখে নিন, এতে চিকিৎসার সময় ঝামেলা কম হয়।
- প্রিমিয়াম ও রিনিউয়াল সুবিধা: প্রিমিয়াম আপনার বাজেটের সঙ্গে মানানসই কিনা এবং রিনিউয়াল নিয়ম কেমন, এটা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
- ডিজিটাল ও দ্রুত পরিষেবা: অনেক সংস্থা এখন ডিজিটাল মাধ্যমে বীমা সুবিধা দিচ্ছে, যা সময় ও কাগজপত্রের ঝামেলা কমায়।
উপসংহার
স্বাস্থ্য বীমা মানে শুধু একটি কাগজে চুক্তি নয়, এটি আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য নিরাপদ ও সুস্থ ভবিষ্যতের একটি প্রস্তুতি। হঠাৎ স্বাস্থ্য সমস্যা এলে চিকিৎসার খরচ যেন বোঝা না হয়ে দাঁড়ায়, সেই নিশ্চয়তা দেয় স্বাস্থ্য বীমা। এটি শুধু আর্থিক সুরক্ষা নয়, বরং মানসিক শান্তিও দেয়, কারণ আপনি জানেন জরুরি সময়ে পাশে থাকার একটি ভরসা আছে।
সঠিক স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনা বেছে নিয়ে আপনি নিজের ও প্রিয়জনদের জন্য স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ, দুটোই সুরক্ষিত করতে পারেন। এটি আসলে এক দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ, যা সুস্থ জীবনধারার পথ তৈরি করে।
সতর্কীকরণ : এই নিবন্ধটি ব্র্যান্ডের পক্ষে এইচটিব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এই প্রবন্ধ লেখার কাজে HT Media-র কোনও সাংবাদিক নিযুক্ত ছিলেন না। এই প্রবন্ধে লেখা তথ্যের সত্যনিষ্ঠতা, প্রাসঙ্গিকতা, যথার্থতা, বৈধতা নিয়ে কোনও দাবি করে না HT Media।
Want to get your story featured as above?