নিউ টাউনের রাস্তায় আর চলাচল করতে পারবে না টোটো ও ই-রিকশার মতো ব্যাটারিচালিত তিনচাকা যান। সম্প্রতি বিধাননগর ট্র্যাফিক কমিশনারেটের তরফে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তাতেই নিউ টাউনের ব্যস্ততম মেজর আর্টেরিয়াল রোডে এই ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: 'আপনি মোটা, ডাবল ভাড়া দিতে হবে,' মহিলাকে আজব দাবি টোটো চালকের, প্রতিবাদ করতেই…
প্রায় ১০.৫ কিমি দীর্ঘ ৬ লেনের এই হাইওয়ের দু’পাশে সার্ভিস রোড রয়েছে। এই রোড নিউ টাউনকে সল্টলেক, সেক্টর ফাইভ এবং ভিআইপি রোডের সঙ্গে সংযুক্ত করে। দিনে-দিনে গাড়ির চাপ বাড়ায় এই রাস্তায় গতি বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।
জানা যাচ্ছে, এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারিত রয়েছে ঘণ্টায় ৬০ কিমি। তাই যানজট এবং দুর্ঘটনা রুখতে এই সিদ্ধান্ত। মেজর আর্টেরিয়াল রোডে, বিশ্ব বাংলা সরণি এবং হিডকো রোড এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় তিনচাকা ব্যাটারি চালিত যানবাহন নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়ে ইতিমধ্যেই এলাকা জুড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি নতুন পোস্টার লাগানো হয়েছে পুলিশের তরফে।
ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, এটা নতুন কোনও নিয়ম নয়। আগে থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা ছিল। সাইনবোর্ডগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা আবার সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লাগানো হয়েছে। পুলিশের দাবি, বহু টোটো চালক নিয়ম সম্পর্কে জানেন। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে তা লঙ্ঘন করেন। মাঝেমধ্যে ধরা পড়লে কিছুদিন নিয়ম মেনে চলেন, তারপর আবার আগের অবস্থায় ফিরে যান। এবার এই নিয়ম কার্যকর করতে প্রশাসন কঠোর মনোভাব নিয়েছে।
নিউ টাউনের বিভিন্ন এলাকায় দৈনিক প্রায় ১,০০০ থেকে ১,২০০টি টোটো চলাচল করে। লাইসেন্স না থাকলেও এই যানগুলি অ্যাকশন এরিয়া ১-র মতো নির্দিষ্ট অংশে দৈনিক চলাচল করে। বাসস্ট্যান্ড, শপিং মল, এবং আবাসনের সামনে নির্ধারিত টোটো স্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা যায়। তবে এগুলি মূল রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে বিপদের সম্ভাবনা বেড়ে যায় বলেই মত ট্র্যাফিক পুলিশের।
এক সিনিয়র অফিসার বলেন, টোটো ও ই-রিকশা ধীরগতির যানবাহন। এগুলির সুরক্ষা ব্যবস্থা খুবই সীমিত। মূল রাস্তায় এদের চলাচল অন্যান্য যানবাহনের গতিতে বাধা সৃষ্টি করে। সেই কারণেই এগুলিকে শুধুমাত্র ব্লকের ভিতরের রাস্তায় চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র রাস্তা পার হওয়ার জন্য ক্রসরোড ব্যবহার করতে পারবে এই যানগুলি, তাও সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ২৫ কিমির মধ্যে রাখতে হবে। বাসিন্দাদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তে সহমত পোষণ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই নিষেধাজ্ঞার সঠিক বিকল্প থাকলে সমস্যা হবে না। যদিও টোটো চালকদের একাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা মূল রাস্তায় যান না এবং স্থানীয় বাসিন্দাদেরই পরিষেবা দেন। ফলে এই নিয়মে তাঁদের কোনও অসুবিধা নেই।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১ মে সল্টলেকের বিএল ব্লকে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয় ই-রিকশার ধাক্কায়। তার পর থেকেই তিনচাকার যান নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ করেছে বিধাননগর ট্র্যাফিক পুলিশ। কমিশনারেট এলাকার সর্বোচ্চ গতি ২৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কারণ এই যানগুলির ব্রেক এবং অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনও যথেষ্ট উন্নত নয়।