ময়নাগুড়ি রেল দুর্ঘটনার কারণ চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে রেল। ময়দানে নেমেছেম খোদ রেলমন্ত্রী তথা IIT কানপুরের প্রাক্তনী অশ্বিনী বৈষ্ণব। দিন কয়েক আগেই দুর্ঘটনার তদন্তে উঠে আসা কারণগুলি নিয়ে দেশের সমস্ত রেল বিভাগের জেনারেল ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সেখানে পুরনো রেক বদলে নতুন LHB কোচের ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু পূর্ব রেলের পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, সেখানে অর্ধেকের বেশি ট্রেনই এখনো চলছে পুরনো কোচ দিয়ে।কী এই LHB কোচ?ট্রেন দুর্ঘটনায় যাত্রীদের আহত বা নিহত হওয়ার মূল কারণ একটি কামরার সঙ্গে অন্য কামরার সংঘর্ষ। ট্রেনের কোনও কামরা বেলাইন হলে ঠিক পিছনের কামরাটি (যেটি তখনও লাইনের ওপরে রয়েছে) সামনের কামরাকে ধাক্কা মারে। তার পর সেই কামরাটিও বেলাইন হয়ে যায়। প্রবল ভরবেগের কারণে পিছনের কামরার ধাক্কায় দুমড়ে যায় সামনের কামরার পিছনের অংশটি। কখনো ২টি কামরার গতিতে ব্যাপক ফারাক হলে একটি কামরা অন্যটির ওপরে উঠে যায়। যে ঘটনা ঘটেছিল ময়নাগুড়িতে। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ে।ট্রেন দুর্ঘটনার এই প্রবণতাকে বিশ্লেষণ করে জার্মানির লিনকে হফম্যান বস কোম্পানি এমন ধরণের কোচ তৈরি করে যা দুর্ঘটনার ফলে ঘটা সংঘর্ষে দুমড়ে গেলেও যাত্রীদের কোনও ক্ষতি হবে না। এজন্য কোচের সামনে ও পিছনের দিকে দুর্ঘটনার অভিঘাত সহ্য করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা রাখা থাকে। সেখানে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা থাকে না। ফলে দুর্ঘটনার জেরে ওই জায়গাটি দুমড়ে গেলেও হতাহতের ঘটনা ঘটে খুব কম।প্রথম ২০০০ সালে জার্মানি থেকে ২৪টি এসি কোচ আমদানি করেছিল ভারতীয় রেল। এর পর কাপুরথলায় এই কোচ তৈরি শুরু করে রেল। এই রেক ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। তবে তার থেকেও বেশি বেগে এই রেককে ছুটিয়ে পরীক্ষা করেছে ভারতীয় রেল।পূর্ব রেলের LHB কোচের ঘাটতিপূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে রয়েছে মোট ১৫৬টি রেক। তার মধ্যে ৬৫টি রেক LHB প্রযুক্তির। বাকি ৯১টি পুরনো রেক। অর্থাৎ পূর্ব রেলের ৫৮ শতাংশ রেক পুরনো। পূর্ব রেলের আধিকারিকদের দাবি, তাদের হাতে প্রথম শ্রেণি বাতানুকুল ও দ্বিতীয় শ্রেণির বাতানুকুল কামরার জন্য পর্যাপ্ত LHB কোচ থাকলেও তৃতীয় শ্রেণির বাতানুকুল ও স্লিপার ক্লাসের জন্য পর্যাপ্ত কোচ নেই। কিন্তু ট্রেনে এই ২ কামরার সংখ্যাই থাকে সব থেকে সব থেকে বেশি। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বাতানুকুল কোচের সংখ্যা থাকে হাতে গোনা। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘একথা ঠিক যে আমাদের কাছে LHB কোচের ঘাটতি রয়েছে। আমরা মন্ত্রককে সেকথা জানিয়েছি। দ্রুত ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলছে।’