নদিয়ার কল্যাণীতে ছ’মাসের শিশুর মৃত্যু নিয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়াল। প্রথমে শিশুর মা দাবি করেন, কোলের ছেলে বাড়ি থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে। তাঁর কান্নাকাটি আর চিৎকারে প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আত্মীয় সবাই ছুটে আসেন খোঁজে। কিন্তু কোথাও মিলছিল না শিশুর সন্ধান। শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। আর সেখানেই ফাঁস হয় বিভীষিকাময় সত্যি। জানা যায়, মা-ই খুন করেছেন নিজের সন্তানকে। এমনই ঘটনা ঘটেছে কল্যাণী থানার সগুনা এলাকায়।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তা পৌঁছোনোর আগেই মৃত্যু হল বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুর
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত মায়ের নাম রূপা ঘোষ। তাঁর স্বামীর বাড়ি কল্যাণী থানার সগুনা এলাকায়। এটি রূপার দ্বিতীয় বিয়ে, আর এই ছেলেটি ছিল সেই সংসারের প্রথম সন্তান। অভিযোগ অনুযায়ী, শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের ছেলেকে গলা টিপে মেরে ফেলেন রূপা। এরপর শিশুর নিথর দেহ ফেলে দেন বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কে। আর তা ঢাকতেই বানিয়ে ফেলেন শিশুচুরির নাটক।
সন্ধ্যার পর থেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ে রূপা জানান, তাঁর ছেলে হঠাৎ নিখোঁজ। চারদিক ছুটোছুটি শুরু হয়। পরিবারে ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ। শেষে খবর যায় থানায়। রাতে পুলিশ এসে শুরু করে তদন্ত। তারা কথা বলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। রূপাকেও জেরা করে। কিন্তু তাঁর কথা শুনে সন্দেহ জাগে পুলিশকর্মীদের মনে। একাধিক জায়গায় অসঙ্গতি খুঁজে পান। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ। অবশেষে রূপা স্বীকার করে ফেলেন সন্তানকে তিনিই খুন করেছেন। পরে সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেন। পুলিশ সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করে শিশুর দেহ। এরপর সেটি পাঠানো হয় কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য। অভিযুক্ত মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রূপার স্বামী সোমনাথ ঘোষ জানান, তিনি বুঝতেই পারছেন না এমন কেন করল রূপা! তবে ছেলে হওয়ার পর থেকে তাঁর মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই পরিবারে প্রায়ই অশান্তি হত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা ছিল পুরনো।কিন্তু সেই অশান্তি থেকে ছ’মাসের একটি শিশুকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত কীভাবে এল? মানসিক অবসাদ, পারিবারিক টানাপোড়েন, নাকি অন্য কোনও কারণ? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও খুঁজে চলেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘিরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবারে।