দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদঘাটনের পর এক ফ্রেমে চলে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দিলীপ ঘোষ। এই দেখে বিজেপির অন্দরে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। সস্ত্রীক বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং বৈঠকের পর বিজেপির ‘গৃহযুদ্ধ’ তুমুল আকার নিয়েছে। বিজেপির সাংসদ–বিধায়করা দিলীপ ঘোষের মুণ্ডপাত করছে। আবার আদি নেতারা দিলীপ ঘোষের পক্ষে। এমনকী এখনকার কিছু সাংসদ–বিধায়ক–নেতা– নেত্রীরাও দিলীপের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সুতরাং গৃহযুদ্ধে বিভক্ত হয়ে পড়েছে পদ্ম দিঘি। এই নিয়ে আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন বাংলায় বিজেপির কাছে কঠিন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে পদ্মপার্টির গোষ্ঠীকোন্দল ‘আদি’ এবং ’দলবদলু’দের মধ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ‘কুৎসিত–কদর্য’ ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে দিলীপ ঘোষ প্রত্যেকটি বিষয়ে জবাব দেওয়ায় আগুনে যেন ঘৃতাহুতি পড়েছে। এই আবহে লড়াই চরমে পৌঁছেছে দিলীপ শিবির বনাম বিরোধী শিবিরের মধ্যে। দিলীপ বিরোধী শিবির বলতে শুরু করেছে, ‘দিলীপের তৃণমূল কংগ্রেসে যাওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা।’ বিজেপির অন্দরে দিলীপ বিরোধী আদি গোষ্ঠীর নেতারা বলছেন, ‘আমি তো আগেই দিল্লিকে সতর্ক করেছিলাম। ওই লোকটা বাংলায় বিজেপিকে শেষ করতে চায়।’ জবাবে দিলীপের গোষ্ঠীর নেতারা বলছেন, ‘যাঁরা এখন বড় বড় কথা বলছেন তাঁরা তো কোনওদিন ভাবতেও পারেনি বাংলায় বিজেপির ১৮টি সাংসদ হবে। ৭৭টি বিধায়ক নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হবে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের আততায়ী অপহরণ করেছে বাংলার কৃষককে, বাড়িতে গেলেন উত্তরবঙ্গের আইজি
অন্যদিকে এখন বিজেপির সাংসদ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২। আর বিধায়ক সংখ্যা কমে ৬৫ হয়েছে। অন্যান্য গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ জিতে যাওয়ার পরও তা হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। আর সেগুলি দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে দেওয়ার পরই বলে চাউর করছেন দিলীপ অনুগামীরা। আর দিলীপ ঘোষ নাম না করে নব্য এবং বিরোধী গোষ্ঠীকে বার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘কেউ মানুক অথবা না মানুক, দিলীপ ঘোষ মানেই বিজেপি। দরকার হলে আমি রাজনীতি ছাড়ব। কিন্তু বিজেপি ছাড়ব না। এটা মমতা বন্দ্যোপাধায়ও জানেন যে, দিলীপ ঘোষ কোনও দিন তৃণমূলে যাবেন না। পার্টির কিছু অবশ্য লোক চাইছেন, আমি দল ছেড়ে দিই। যাতে আমার জায়গা খালি হয়। কিন্তু তার কোনও চান্স নেই।’
এছাড়া পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মেদিনীপুর শহরে দিলীপ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জেলা বিজেপি সভাপতি শমিতকুমার মণ্ডলকে মারধর করে বিরোধী শিবিরের লোকজন। শমিতবাবুর গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এফআইআর করা হয়েছে বিজেপি’র একাধিক নেতার বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যেই দিলীপের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন অর্জুন সিং, তথাগত রায়, সজল ঘোষ, কৌস্তুভ বাগচি, শুভেন্দু অধিকারীরা। পাল্টা দিলীপের বক্তব্য, ‘তথাগত রায় পার্টিকে কী দিয়েছেন? একটা পঞ্চায়েত জেতাতে পেরেছেন? একটা কাউন্সিলর দিতে পেরেছেন? আমার গাড়ি ভেঙে, আমাকে কালো পতাকা দেখিয়ে তো অনেকে তৃণমূলে নেতা হয়েছেন। তাঁরাই এখন বিজেপির নেতা। এটাই রাজনীতি। কিন্তু দলের কর্মীরা জানেন, কে গঙ্গাজল আর কে বেনোজল।’