একদিকে যখন বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যে 'ভূতুড়ে ভোটার' ঢোকানোর অভিযোগ তুলে 'মাঠে নেমে' সাম্প্রতিক ভোটার তালিকা যাচাই করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও কর্মীরা, ঠিক সেই আবহে নদিয়ার শান্তিপুরের বিডিও-র একটি চিঠি ও উদ্যোগকে কেন্দ্র করে পালটা আক্রমণের পথে হাঁটলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। তাঁকে সরাসরি নিশানা করতে গিয়ে টেনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কেও।
শান্তিপুরের বিডিও সন্দীপ ঘোষ আগামী ৫ মার্চ একটি সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছেন এবং শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুরু করে বাম, বিজেপি, কংগ্রেস-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরই সেই বৈঠকে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, ওই বৈঠকেই প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তাঁদের নির্বাচনী বুথ এজেন্টদের তালিকা বিডিও অফিসে জমা দেবেন। এবং এলাকার মৃত বা অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটারদের সম্পর্কেও তথ্য সরবরাহ করবেন।
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, শান্তিপুরের বিডিও-এর এই ধরনের কোনও বৈঠক ডাকার অধিকার নেই। একমাত্র যদি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়, বা নির্দেশ দেওয়া হয়, তবেই তিনি এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ করতে পারেন, নচেৎ নয়।
শুভেন্দুর আরও দাবি, রাজ্যের সরকার ও শাসকদল, বিশেষ করে 'তাঁর রাজনৈতিক প্রভু মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের' নেকনজরে থাকার জন্যই শান্তিপুরের বিডিও এই ধরনের 'পক্ষপাতদুষ্ট' আচরণ করেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে যাতে কঠোর পদক্ষেপ করা হয় এবং আগামী নির্বাচনী ক্রিয়াকর্ম থেকে তাঁকে যাতে বাইরে রাখা হয়, সেই আবেদন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিরোধী দলনেতা।
প্রসঙ্গত, নিয়ম অনুসারে - জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, বিডিও-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের আমলা ও আধিকারিকরাই নির্বাচনী বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। শান্তিপুরের বিডিও-ও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি তাঁর পদাধিকারবলে শান্তিপুর এবং রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক (অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার)।
যদিও শুভেন্দুর বক্তব্য, গত ৫ জানুয়ারিই (২০২৫) চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন কমিশন নির্দেশ না দিলে সেই তালিকা সংশোধন করা যাবে না। কিন্তু, শান্তিপুরের বিডিও তেমন কোনও নির্দেশ ছাড়াই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সংশ্লিষ্ট বৈঠকের ডাক দিয়ে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) ওই চিঠি দিয়েছেন। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে সেই চিঠির ছবি-সহ একটি দীর্ঘ পোস্টও করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
যদিও তাঁর এই অভিযোগ মানতে নারাজ শান্তিপুরের বিডিও সন্দীপ ঘোষ। তাঁর দাবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বুথ এজেন্টের তালিকা তৈরি করার জন্যই মূলত এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। এটা একটা 'কন্টিনিউয়াস প্রসেস'। এর জন্য আলাদা করে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামীও কার্যত বিডিও-র বক্তব্যকেই সমর্থন করেছেন।