কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ ও নির্দেশের পর অবশেষে টনক নড়ল মালদা জেলার স্থানীয় প্রশাসনের। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী লাভলি খাতুন ওরফে নাসিয়া শেখকে শোকজ বা কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠালেন মহকুমাশাসক! তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তাঁর পঞ্চায়েত প্রধানের পদ বাতিল করা হবে না? সাতদিনের মধ্যে লাভলিকে এই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন আগেই হঠাৎ করে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুররের রসিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে জানা যায়, এই এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান, যিনি কিনা রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন এবং পঞ্চায়েত প্রধানের চেয়ারে বসেছিলে, সেই লাভলি খাতুন আদতে ভারতীয়ই নন!এই ঘটনা সামনে আসতেই রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে শুরু হয় কাজিয়া। তারই মধ্যে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই করার সময় লাভলি যে সচিত্র পরিচয়পত্র, জন্মের শংসাপত্র, ওবিসি শংসাপত্র প্রভৃতি দিয়েছিলেন, সে সবই জাল! ইতিমধ্যেই লাভলির সেই ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে।এই ঘটনা আদালতেও গড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন বাংলাদেশি ভারতে অনুপ্রবেশ করলেন, পরিচয় ভাঁড়ালেন এবং ভোটেও দাঁড়িয়ে পড়লেন, জিতে জনপ্রতিনিধি হলেন, অথচ পুলিশ প্রশাসন কিছুই জানতে পারল না! এটা কীভাবে সম্ভব? প্রশ্ন ওঠে, লাভলি এখনও কীভাবে পঞ্চায়েত প্রধানের পদে বহাল রয়েছেন, তা নিয়েও। এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট প্রশাসনকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়। আর তার জেরেই এবার লাভলিকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হল।প্রসঙ্গত, লাভলি খাতুনের আসল নাম নাসিয়া শেখ। ভারতের অনুপ্রবেশের পর ২০১৫ সালে ভারতীয় হওয়ার অন্যতম প্রমাণপত্র হিসাবে নিজের জাল ভোটার কার্ড তৈরি করান তিনি। ২০১৮ সালে ইস্যু হয় তাঁর ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট। এমনকী, সংশ্লিষ্ট নথিতে নিজের বাবার নামও মিথ্যা লেখেন লাভলি ওরফে নাসিয়া।২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন লাভলি। তাঁর কাছে পরাজিত হন রেহানা সুলতানা। পরবর্তীতে এই রেহানা সুলতানা কলকাতা হাইকোর্টে লাভলি খাতুনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর একের পর এক, ঝুলি থেকে বিড়াল বেরোতেই থাকে।এই প্রেক্ষাপটে লাভলির বিষয়ে সমস্ত দায় ঝেড়ে ফেলতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। দলের হরিশ্চন্দ্রপুরের ব্লক সভাপতি মর্জিনা খাতুনের বক্তব্য হল, ইতিমধ্যেই লাভলির জাল ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে। এবার যা করার প্রশাসনই করবে!যদিও বিরোধী রাজনৈতিক শিবির এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে, অবিলম্বে যাতে লাভলিকে গ্রেফতার করা হয়, বিরোধী পক্ষের তরফ থেকে সেই দাবিও উঠেছে।