গরু পাচার সন্দেহে রাস্তায় থামানো হয়েছিল একটি গাড়ি। এরপর গাড়িতে থাকা কয়েকজনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাস্তায় কান ধরে হাঁটানো হয়। সেইসঙ্গে বেধড়ক মারধর করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেই দৃশ্যের ছবি ও ভিডিয়ো। দুর্গাপুরের ডিপিএল টাউনশিপ এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযোগ উঠেছে, গরু পাচারের ভুয়ো দাবি করে তাঁদের মারধর করা হয়েছে। ঘটনায় সরাসরি অভিযুক্ত বিজেপির যুব মোর্চা নেতা পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: মন্দিরের সামনে থেকে ষাঁড় চুরি রুখতে গিয়ে 'খুন' পুলিশের চালক, জখম ২ পুলিশকর্মী
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, গরু বোঝাই যে গাড়িটি থামানো হয়েছিল, তা বৈধভাবে চলাচল করছিল। সমস্ত কাগজপত্র সঠিক ছিল। বাঁকুড়ার একটি হাট থেকে গরু কিনে ওই গাড়ি যাচ্ছিল জেমুয়ার উদ্দেশে। পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এ ঘটনাকে গরু পাচার বলা যাবে না। এরপরই নড়েচড়ে বসে কোকওভেন থানার পুলিশ। শুক্রবার রাতে আসানসোলে এক জরুরি সাংবাদিক সম্মেলনে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী। তিনি জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম দীপক দাস ও অনীশ ভট্টাচার্য। তাঁরা দুই স্থানীয় বিজেপি কর্মী।
পুলিশ কমিশনার জানান, ঘটনার সময় পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরও ১৫-২০ জন ছিলেন। তাঁদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। আইন নিজের পথে চলবে। যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার পর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও কড়া প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই ঘটনার নিন্দা করে বলেন, কিছু গরিব মানুষ গরু কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। বিজেপির নাম ভাঙিয়ে কিছু লোক তাঁদের বেধড়ক মারধর করেছে। টাকাপয়সা পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। এ ধরনের নৃশংসতা বরদাস্ত করা যায় না।
তবে অভিযুক্ত বিজেপি নেতা পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় নিজের অবস্থান থেকে সরেননি। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, গাড়ির চালক ও খালাসির কাছে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা দেখাতে পারেনি বলেই তারা প্রতিবাদে নামেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, গরু পাচার চলছে দিনের পর দিন। যদি জেলে যেতে হয় তাও যাবেন, কিন্তু গরু পাচার রুখবেন। পুলিশ জানিয়েছে, পারিজাত বর্তমানে পলাতক। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলেই জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।