কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে পর্যটকদের গুলি করে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। আর তার জেরেই রক্তাক্ত হয়েছে বরফে ঢাকা সবুজে ঘেরা ভূস্বর্গ। হিন্দুদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে একদিন আগেই। নাম জেনেই গুলি করে ঝাঁঝরা করা হয়েছে একের পর এক হিন্দু পর্যটককে বলে অভিযোগ। পহেলগাঁওয়ে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হাড়হিম করা হত্যাকাণ্ড যখন প্রকাশ্যে আসে তখন শিউরে ওঠে গোটা দেশ। শিহরিত ভারত–সহ গোটা বিশ্ব। আর এই আবহে পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার নিন্দা করে ধর্মত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন বাদুড়িয়ার এক শিক্ষক।
জঙ্গিদের কোনও জাত–ধর্ম হয় না। তাদের একটাই জাত বা ধর্ম—সন্ত্রাসবাদী। সেখানে বাংলার শিক্ষকের এমন সিদ্ধান্ত বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে অনেকেই মনে করছেন। বাদুড়িয়ার শিক্ষক সাবির হোসেন। পহেলগাঁওয়ে যে জঙ্গি হামলা হয়েছে সেটার প্রতিবাদে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। নিজেই সে কথা জানিয়েছেন। যদিও এখনও আইনি পথে হাঁটেননি তিনি। তবে শীঘ্রই সে পথে হেঁটে আইনত ‘ধর্মহীন’ হবেন বলে জানিয়েছেন এই শিক্ষক। বাদুরিয়ারই বাসিন্দা এই শিক্ষক। স্বরূপনগর ব্লকের নির্মাণ আদর্শ বিদ্যাপীঠের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক। তাঁর ভিডিয়ো বার্তা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। যেখানে শিক্ষক সাবির হোসেন ধর্মত্যাগ করার কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন: কলকাতা পুরসভার সমবায় সমিতির নির্বাচন হচ্ছে না, স্থগিত করল রাজ্যের শীর্ষ আদালত
হিন্দুদের মৃত্যুর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে নিজের ধর্মই তাগ করার কথা ভেবেছেন শিক্ষক সাবির হোসেন। হিন্দু–মুসলমান বিভাজন নিয়ে যখন দেশের রাজনীতি তোলপাড় তখন এমন সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে তারিফের যোগ্য। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর শিক্ষক সাবির হোসেন বলেন, ‘আমরা সবসময় বলি জঙ্গিদের কোনও জাত–ধর্ম হয় না। কিন্তু এই জঙ্গিরা ধর্মীয় পথকে ব্যবহার করে নির্মম হত্যা করেছে। ধর্ম পরিচয় জিজ্ঞাসা করে মানুষকে হত্যা করেছে। এটা ভুলতে পারছি না। এই ঘটনায় আমি লজ্জিত। আর তাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তাছাড়া এই শিক্ষক ধর্মকে ছোট করতে চাননি বলেও বার্তা দিয়েছেন। বরং তিনি এসব নিয়ে একেবারে বীতশ্রদ্ধ হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ভেদাভেদ তিনি মানতে পারছেন না। অতীতেও এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী তিনি। তাই শিক্ষক সাবির হোসেনের বক্তব্য, ‘আমি বাদুড়িয়াতেও অতীতে দেখেছি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা। দেশে এবং সারা পৃথিবীতেই এমন ঘটনা দেখে আমি বীতশ্রদ্ধ। পহেলগাঁওয়ে যেভাবে ধর্ম দেখে মানুষকে খুন করা হল তাতে আমি স্তম্ভিত। আমরা জানি, জঙ্গিদের কোনও ধর্ম হয় না। কিন্তু পহেলগাঁওয়ের ঘটনা দেখাল, জঙ্গিদেরও ধর্ম হয়। একজন শিক্ষক হিসেবে তাই আমি লজ্জিত। এই কারণে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। আমি কোনও ধর্মকে ছোট করছি না। এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’